এবার বিপাকে রাজ্যের শিক্ষকরা! বিরাট পদক্ষেপ নিল CBI, দুর্নীতি মামলায় নয়া মোড়

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরেই নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) মামলায় সরগরম রাজ্য। বিগত কয়েক বছরে এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সাথে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দলের একাধিক হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রীর। এই নিয়োগ মামলায় আজও জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় নেতা, মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের এই ধরপাকড়ের মধ্যেই এবার এই মামলায় কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সিবিআই।

নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) মামলায় বিরাট আপডেট 

সূত্রের খবর, চলতি মাসের শুরুর দিকেই এই নিয়োগ মামলার (Recruitment Scam) তদন্তকারী অফিসাররা ১০৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার একটি তালিকা তৈরী করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জানা যাচ্ছে, ওই তালিকায় থাকা প্রায় ৪০ জনকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তালিকায় থাকা বাকি শিক্ষকদের  আগামিকাল, অৰ্থাৎ সোমবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা  শুরু হবে।

জানা যাচ্ছে, চলতি মাসের মধ্যেই অর্থাৎ আগামী ২৪ মার্চের মধ্যেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের  জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শেষ করার লক্ষ্য স্থির করেছেন তদন্তকারীরা।অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি (Recruitment Scam) যোগ্যতামান নির্ধারণের পরীক্ষা (টেট) থেকে শুরু হয়েছিল। সূত্রের দাবি, এই তালিকাভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের টেট পাশ করা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠছে তাঁদের চাকরির বৈধতা নিয়েও।

প্রসঙ্গত, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের মোট ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হয়েছিল। পরে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও ওই একই রায় বহাল রেখেছিল। সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষকদের  চাকরি বাতিলের উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিলেও এখনও পর্যন্ত তদন্তের নির্দেশ বহাল রয়েছে। জানা যাচ্ছে সর্বোচ্চ আদালতের ওই অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের ফলেই এখনও ওই ৩২ হাজার শিক্ষক চাকরি করছেন।

আরও পড়ুন: BJP তে ভাঙন ধরিয়ে তৃণমূলে যাচ্ছেন ১২ জন বিধায়ক! তালিকায় কারা? তোলপাড় বাংলা

মামলার (Recruitment Scam) অন্যতম আবেদনকারী রমেশ মালিকের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘যাঁরা দুর্নীতির সুযোগে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অপরাধের উৎসে পৌঁছতে হবে, আদালতে আমরা একথা বলেছিলাম। এত দিনে সেই তদন্ত শুরু হয়েছে।’ উল্লেখ্য, এই মামলায় আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়ে সিবিআই তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছিলেন, টেট-এর ভুল প্রশ্ন নিয়ে মামলা হওয়ার পরে ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ একটি বৈঠক করে ভুল প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সিবিআই সূত্রের দাবি, তারপরেই কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল-সহ আরও কয়েকজন একটি চক্র তৈরি করে পাশ করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি-কোটি টাকা তুলেছিলেন।

Government employees school teacher

এখানেই শেষ নয়, জানা যাচ্ছে, পরীক্ষার্থীরা যে পাশ করেছেন তা দেখানোর জন্য টেট-এর ফলাফল সংক্রান্ত একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল এবং ভুয়ো ই-মেলও পাঠানো হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালে এই মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার প্রায় তিন বছর পরে কর্মরত শিক্ষকদের তলব করা হয়েছে। তদন্তকারী অফিসাররা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে যে চিঠি পাঠিয়েছেন সেখানে বলা হয়েছে ওই তালিকায় নাম থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ২০১৪ সালের টেট-এর অ্যাডমিট কার্ড ও নিয়োগপত্র নিয়ে সিবিআই দফতরে হাজির হতে হবে।

সূত্রের খবর, ওই তালিকায় দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, কোচবিহার, কলকাতা, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা আছেন। তবে জানা যাচ্ছে, ওই তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুরের শিক্ষকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তবে মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার এতদিন পর শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। একইসাথে প্রশ্ন উঠছে এই দুর্নীতির মূল উৎসে পৌঁছতেই বা সিবিআইয়ের আর কত দিন লাগবে, তা নিয়েও।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর