‘মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ’ কল্যাণকে বিশেষ দায়িত্ব? এবার কি অ্যাডভোকেট জেনারলের ওপর খবরদারি করবে রাজ্য?

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে নবীন প্রবীণ দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। সামনেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট। তাই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে নতুন-পুরনোর এই দ্বন্দ্ব ভুলে একজোট  হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সুর শোনা গিয়েছিল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী (Kaustav Bagchi)।

রাজ্যের হাইকোর্টের (High court) অ্যাডভোকেট জেনারলের নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট কৌস্তভ বাগচীর

বুধবার একটি ফেসবুক পোস্টে এই বিজেপি নেতা লিখেছেন, ‘রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারলের (High court) মাথার উপর, অসাংবিধানিক ভাবে, সিনিয়র অ্যাডভোকেট শ্রী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (পিসির অনুগামী) বসাতে চাইছে রাজ্য। ফাইলের ছাড়পত্র মার্চ, ২০২৫ এর প্রথম সপ্তাহেই দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। কিন্তু নিন্দুকেরা বলছেন বাদ সাদছেন ভাইপো, উনি চাইছেন এই পদে তার অনুগামী কাউকে বসাতে।’ এরপরেই কটাক্ষের সুরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে কৌস্তভ লিখেছেন, ‘বলছি আমাদের রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান কে? মুখ্যমন্ত্রী না আগামীর পোলা,আগুনের গোলা?’

বাংলা হান্টের তরফ থেকে ওই ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল কৌস্তভ বাগচীর সাথে। এপ্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এখন প্রশাসন চালাচ্ছেন কে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তাঁর আদরের ভাইপো? প্রশ্ন তা সেখানেই। কদিন আগে ‘আগামীর নেতা’, ‘আগুনের পোলা,’আগুনের গোলা’ এসব অনেক ফেসবুক পোস্ট আমরা দেখেছি। তাহলে এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীকে কি ওভার পাওয়ার করে যাচ্ছেন তাঁর আদরের ভাইপো?’ একইসাথে তিনি জানিয়েছেন, ‘শ্যাডো চিফ মিনিস্টারের বিষয় যদি থাকে, তাহলে সেটা তো প্রশাসনিক ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো বার্তা দেয় না! বিষয়টা তাঁদের ব্যাপার। তবে তাঁদের পারিবারিক যে কলহ তার প্রভাব যদি প্রশাসনের ওপর পড়ে সেটা তো খুব একটা ভালো জিনিস নয়।’

প্রসঙ্গত গতকাল দেখা গিয়েছিল ‘হিন্দু আবেগকে’ সামনে রেখে বিজেপিকে পাল্টা কটাক্ষ করে ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই’ পোস্টার টানিয়েছিল তৃণমূলের আইটি সেল। বিকাশভবনের সামনে তৃণমূলের সেই পোস্টারে মুখ ঢেকেছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বান্দ্যোপাধ্যায়ের। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। বাংলা হান্টের তরফ থেকে এপ্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কৌস্তভ বাগচী এদিন বললেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে দলীয়ভাবেই ঢেকে দিতে চাইছে, প্রশাসনিকভাবেই ঢেকে দিতে চাইছে, তো আবার পোস্টার বা ব্যানারে আলাদা করে মুখ ঢেকে দেওয়ার আর কি গুরুত্ব থাকবে।’

মাঝে বেশ কিছুদিন ধরেই কানাঘুঁষো শোনা যাচ্ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জল্পনা মাথাচাড়া দিতেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতামত ছিল, গত কয়েকমাসে সংগঠনের কাজে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল ৷ একইসাথে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক পদক্ষেপ এবং তাঁর দেওয়া একাধিক নির্দেশ ঘিরেও তৈরী হয়েছিল জল্পনা।  এমনকি মুখ্যমন্ত্রী নিজেও একাধিকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো হিসাবে তিনিই দলের শেষ কথা।সেসময় অনেকেই মনে করেছিলেন, তৃণমূলের রাশ এখনই অভিষেকের উপর ছাড়তে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর! ভাগ হল কাজের দায়িত্ব

এহেন জল্পনার মাঝেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের মহাসমাবেশ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন সব খবর মিথ্যে। তাঁর কথায়, ‘আমার গলা কেটে দিলেও, সেই গলা দিয়ে বেরোবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ।’ অভিষেকের এই মন্তব্যের পর বিরোধীরা বিদ্রুপের সুরে বলেছিলেন ‘আমে দুধে মিশে যাবে!’ তারপর আইপ্যাক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ বার্তা কিংবা সম্প্রতি সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠক প্রমাণ করেছে তাঁর প্রতি দলের আস্থার কথা। 

kaustav bagchi

প্রসঙ্গত গত সপ্তাহে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই বৈঠকের পর সোশ্যাল মিডিয়া ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল, ‘আগামীকে মানতে হবে।’ কিংবা ‘পোলা তো নয় আগুনের গোলা’ পোস্টে। আর এসবের মধ্যেই আবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারলের মাথার উপর, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ’ সিনিয়র অ্যাডভোকেট শ্রী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্য বসাতে চাওয়ায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে বলেই ফেসবুক পোস্টে ইঙ্গিত দিলেন বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর