বাংলা হান্ট ডেস্ক : “সব পাখিই বৃষ্টিতে আশ্রয় চায় কিন্তু ঈগল বৃষ্টিকে এড়িয়ে মেঘের ওপর দিয়ে যায়।”
ধারণা যা একেবারে বদলাতে পারেনা এই বাণীকারক।
১৫ অক্টোবর ১৯৩১ জন্মেছিলেন মিশাইল ম্যান। পাশাপাশি জন্ম হয়েছিল বহু মানুষের জীবন পরিবর্তকের।রামেশ্বরম, রামনাথস্বামী জেলার জয়নুল-আবেদিন (বাবা) এবং অশিয়াম্মা (মা)র আদর্শ সন্তান,যিনি আবার বদলেছেন আদর্শের আদর্শ সংজ্ঞাও।চিন্তক পদ্ধতি বদলেছেন, বলেছেন থুড়ি বলার ক্ষমতা রেখেছেন-
“স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে। আর স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন হল সেটাই যেটা পুরণের প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।”
নিজের জীবনের কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে তিনিই আবার কখনও বলেছেন-
“ছাত্রজীবনে বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়ে, হয়ে গেলাম রকেট বিজ্ঞানী”
জীবন নিয়ে দিয়েছেন বহু ধাঁধাঁর উত্তরও,স্পষ্ট করতে পেরেছেন-
“জীবন হলো এক জটিল খেলা। ব্যক্তিত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে তুমি তাকে জয় করতে পার।”
ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি তথা বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক, রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেন একজন খুবই সাধারণ মানের ছাত্র হিসেবে,তাই হয়ত তিনিই জোড় রাখতে পারেন-
“জাতির সবচেয়ে ভাল মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে।”
তবে তিনি পড়াশোনাতে গভীর মনোযোগী ও কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন।বলেছেন-
“যারা মন থেকে কাজ করে না, তাঁরা আসলে কিছুই অর্জন করতে পারে না। আর করলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।”
জানা যায় স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পর, তারপর তিনি ভর্তি হন তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে এবং সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন | এরপর ১৯৫৫ সালে তিনি চেন্নাইয়ে চলে আসেন এবং সেখানকার মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিমানপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান |
তারপর তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থায় (DRDO) নিয়োগ হন এবং সেখানে হভারক্রাফ্ট প্রকল্পের সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন কিন্তু DRDO-তে নিজের কাজে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি পরবর্তী সময়ে সেই সংস্থাকে ছেড়ে দেন |
এরপর সাল ১৯৬২, যখন স্যার এ.পি.জে আব্দুল কালাম ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ISRO-তে যোগ দেন আর সেখানে অনেক বছর কাজে করে বিভিন্ন মহাকাশ সম্বন্ধীয় পরিকল্পনার সফলপূর্বক পরিচালনা করেন।
তাঁর সেখানে সবচেয়ে বিখ্যাত অবদান ছিলো,যখন তিনি নিজের তৈরী ভারতের সর্বপ্রথম উপগ্রহ “রোহিনী” অর্থাৎ SLV3-এর সফল উৎক্ষেপন করেন এবং সেটাকে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করতে সফল হন |
এছাড়া ISRO-তে কাজ করার সময় তিনি দেশ-বিদেশে অনেক খ্যাতি অর্জন করেন | সেই সময় তাঁকে আমেরিকার স্পেস এজেন্সী NASA-তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো কিন্তু সেখানে তিনি কাজ করতে রাজি হননি |
সাল ১৯৯৮, যখন স্যার এ.পি.জে আব্দুল কালামের নেতৃত্বেই ভারত দ্বিতীয়বারের জন্য পরমাণু বোমের সফলভাবে পরীক্ষা করতে সক্ষম হয় | যার সুবাদে তিনি সেইসময়ে হয়ে ওঠেন ভারতের সবথেকে বিখ্যাত এবং সফল পরমাণু বৈজ্ঞানিক | বর্তমানে আজ তাঁর জন্যই কিন্তু ভারত, পরমাণু হাতিয়ার নির্মান করতে সফল হতে পেরেছে |
এই মহান বিজ্ঞানী নিজের পরিচিতি দিতেন ভারতীয়
বলে। তিনি আমাদের চোখের সঙ্গ ছেড়েছেন ২৭ জুলাই ২০১৫ (৮৩ বছর)এ তবে মনসঙ্গ জুড়ে আজও তার দাপাদাপি এতটুকু ম্লান হতে পারেনি। জীবনের প্রতিটা পত্রে প্রতিটি ছত্রে তিনিই যে উৎসাহিত করেন, উদ্ভাবিত করেন।