১.২৭ লক্ষ কোটির উৎপাদন! এবার এই সেক্টরে বাজিমাত করল ভারত, জয়জয়কার “মেক ইন ইন্ডিয়া”-র

বাংলা হান্ট ডেস্ক: গত এক দশকে প্রতিরক্ষা উৎপাদন তথা ডিফেন্স প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে ভালো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে ভারত (India)। মূলত, “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের সূচনার পর থেকে দেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদন অসাধারণ গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রেকর্ড ১.২৭ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, একসময় বিদেশি সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীল ভারত এখন দেশীয় উৎপাদনে একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায়, অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার মাধ্যমে ভারত তার সামরিক শক্তিকে রূপ দিচ্ছে।

এই সেক্টরে বাজিমাত করল ভারত (India):

প্রতিরক্ষা বাজেটে বিপুল বৃদ্ধি: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, প্রতিরক্ষা উৎপাদনে এই পরিবর্তন স্বনির্ভরতার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। পাশাপাশি, এই বিষয়টি এটাও নিশ্চিত করে যে ভারত (India) কেবল তার নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করে না, বরং একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শিল্পও গড়ে তোলে যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। মূলত, সঠিক কৌশলগত নীতি এই গতি বাড়িয়েছে। বেসরকারি অংশীদারিত্ব থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং উন্নত সামরিক প্ল্যাটফর্মের উন্নয়নকে উৎসাহিত করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ২.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা। যা ২০২৫-২৬-এ বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৮১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই বিষয়টি দেশের সামরিক পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য দেশের সংকল্পকে জোরদার করে।

This time India has produced huge amounts in this sector.

প্রতিরক্ষা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
১. ৬৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এখন দেশীয়ভাবে তৈরি করা হয়। যার মধ্যে ১৬ টি DPSU, ৪৩০ টিরও বেশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানি এবং প্রায় ১৬,০০০ MSME রয়েছে।
২. মোট প্রতিরক্ষা উৎপাদনে বেসরকারি খাতের অবদান হল ২১ শতাংশ
৩. ২০২৯ সালের মধ্যে ৩ লক্ষ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা উৎপাদনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, প্রতিরক্ষা রফতানি ২১ গুণ বেড়ে ৮৮,৩১৯ কোটি টাকা হয়েছে
৪. সুদূর রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সরঞ্জামের অংশ হয়ে উঠেছে “মেড ইন বিহার” জুতো। জেনে অবাক হবেন, ভারত এখন ১০০ টিরও বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি করছে
৫. আমেরিকা, ফ্রান্স এবং আর্মেনিয়া ২০২৩-১৪ সালে শীর্ষ ক্রেতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, সরকারের লক্ষ্য হল ২০২৯ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা রফতানির পরিমাণ ৫০,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছনো।

আরও পড়ুন: মাত্র ১০ বছরেই বাজিমাত, গোটা বিশ্বকে চমকে দিল ভারত! আমেরিকা-চিনও পেলনা পাত্তা, ব্যাপারটা কী?

দেশীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদন বৃদ্ধি: জানিয়ে রাখি যে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে মূল্যের দিক থেকে ভারত (India) দেশীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদনে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি অর্জন করেছে। এটি স্বনির্ভরতা অর্জনের ওপর দৃষ্টিনিক্ষেপ করা সরকারি নীতি এবং উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন দ্বারা চালিত হয়েছে। সমস্ত প্রতিরক্ষা পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (DPSUs), অন্যান্য পাবলিক সেক্টর ইউনিট এবং প্রতিরক্ষা পণ্য উৎপাদনকারী বেসরকারি সংস্থাগুলির তথ্য অনুসারে, প্রতিরক্ষা উৎপাদনের মূল্য ১,২৭,২৬৫ কোটি টাকার রেকর্ড মূল্যে পৌঁছেছে। যা ২০১৪-১৫ সালে ৪৬,৪২৯ কোটি টাকার নিরিখে ১৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

“মেক ইন ইন্ডিয়া”-কে শক্তিশালী করা: এই বিপুল বৃদ্ধি “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের দ্বারা চালিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ধানুশ আর্টিলারি গান সিস্টেম, অ্যাডভান্সড টোয়েড আর্টিলারি গান সিস্টেম (ATAGS), মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক (MBT) অর্জুন, লাইট স্পেশালিস্ট ভেহিকল, হাই মোবিলিটি ভেহিকল, লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (LCA) তেজস ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: বড় খবর! সোনা-রুপোর দামে এবার ঘটল পতন, ১০ গ্রাম কিনতে গেলে করতে হবে এত খরচ

এছাড়াও, এই বিষয়টি অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার (ALH), লাইট ইউটিলিটি হেলিকপ্টার (LUH), আকাশ মিসাইল সিস্টেম, ওয়েপন লোকেটিং রাডার, 3D ট্যাকটিক্যাল কন্ট্রোল রাডার, এবং সফ্টওয়্যার ডিফাইন্ড রেডিও (SDR) সহ উন্নত সামরিক প্ল্যাটফর্মগুলির বিকাশকে সক্ষম করেছে। এর পাশাপাশি, ডেস্ট্রয়ার, দেশীয় বিমানবাহী রণতরী, সাবমেরিন, ফ্রিগেট, কর্ভেট, দ্রুত টহল জাহাজ, দ্রুত আক্রমণ ক্রাফট এবং অফশোর টহল জাহাজের মতো নৌ সম্পদও তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা রফতানির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রতিরক্ষা উৎপাদনে ভারতের (India) বিশ্বব্যাপী উপস্থিতির সম্প্রসারণ স্বনির্ভরতা এবং কৌশলগত নীতি হস্তক্ষেপের প্রতি প্রতিশ্রুতির একটি প্রত্যক্ষ ফলাফল। প্রতিরক্ষা রফতানি ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ছিল ৬৯৬ কোটি টাকা। যা এখন বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সর্বকালের সর্বোচ্চ ২১,০৮৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যেটিতে গত দশকে ৩০ গুণ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর