বাংলা হান্ট ডেস্ক: গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও-তে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটে। যেখানে পাক সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে জঙ্গিরা নিরীহ পর্যটকদের ওপরে হামলা চালায়। এমতাবস্থায়, এই ঘটনার পরেই রীতিমতো গর্জে উঠেছে সমগ্র ভারত। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানকে (Pakistan-India) উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যেও সরকারের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে। এমতাবস্থায়, যুদ্ধের আবহ তৈরি হলে পাকিস্তানকে ঠিক কিভাবে টক্কর দেবে ভারত? অর্থাৎ সামরিক দিক থেকে ভারত না পাকিস্তান কে বেশি শক্তিশালী? এই প্রসঙ্গটি বর্তমান প্রতিবেদনে উপস্থাপিত করা হল।
সামরিক দিক থেকে পাকিস্তানের তুলনায় ভারত (Pakistan-India) কতটা শক্তিশালী?
আসলে, সামরিক শক্তির বিচারে দেখতে গেলে এশিয়ার দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয় ভারত ও পাকিস্তান (Pakistan-India)। বহু দশক ধরেই এই দুই দেশের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বারংবার মাথাচাড়া দেয়। এমতাবস্থায়, ভারত এবং পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি ও বাহিনীগত সক্ষমতা সবসময়ই একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ২০২৫ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার র্যাঙ্কিং অনুসারে, সামরিক শক্তির দিক থেকে ভারত বিশ্বে চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে। যেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১২ তম।
এদিকে, ভারতের সামরিক বাজেট ৬৪০ হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি, সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ ৫৫ হাজার। যেটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনী হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও, সংরক্ষিত বাহিনী রয়েছে ১১ লক্ষ ৫৫ হাজার এবং আধাসামরিক বাহিনীর সংখ্যা ২৫ লক্ষ ২৭ হাজার। অর্থাৎ, এই বিপুলসংখ্যক সেনা ভারতের ভূখণ্ডীয় নিরাপত্তা এবং সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে, আমরা যদি এই পরিসংখ্যানের নিরিখেই পাকিস্তানের (Pakistan-India) দিকে চাপাই তাহলে দেখা যাবে যে, ওই দেশের সামরিক বাজেট ৬৫ হাজার কোটি টাকা। যা ভারতের তুলনায় অনেক কম। যদিও, ওই দেশের ভৌগোলিক আকার থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক অবস্থা এবং কৌশলগত প্রয়োজন বিবেচনায় এই বাজেট যথাযথ হিসেবেই গণ্য করা হয়। পাকিস্তানের সক্রিয় সেনা সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার। অপরদিকে, সংরক্ষিত বাহিনী ৫ লক্ষ ৫০ হাজার এবং৫ লক্ষ সদস্য নিয়ে আধাসামরিক বাহিনী গঠিত।
আরও পড়ুন: “পহেলগাঁওয়ে আমরা হামলা করিনি”, ভারতের ভয়েই দিশেহারা অবস্থা? বিবৃতি জারি করে পাল্টি খেল TRF
এবারে আসি বায়ুসেনার ক্ষেত্রে তুলনামূলক পরিসংখ্যানে। বর্তমানে ভারতের হাতে রয়েছে ২,২২৯টি এয়ারক্র্যাফট। যার মধ্যে ৫১৩টি যুদ্ধবিমান “মিশন রেডি” হিসেবে প্রস্তুত। এছাড়াও রয়েছে ১৩০টি অ্যাটাকিং ফাইটার, ৮৯৯টি হেলিকপ্টার এবং ৮০টি অ্যাটাক কপ্টার। যেগুলি প্রত্যক্ষভাবে শত্রুপক্ষের অবস্থানে দ্রুত আঘাত হানতে সক্ষম করে তোলে ভারতের বিমান বাহিনীকে। এদিকে, পাকিস্তানের (Pakistan-India) বায়ুসেনাতে আপাতত রয়েছে ১,৩৯৯ টি এয়ারক্র্যাফট। যার মধ্যে ৩২৮ টি যুদ্ধবিমান ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। এছাড়াও, অ্যাটাকিং যুদ্ধবিমান রয়েছে ৯০ টি এবং হেলিকপ্টার রয়েছে ৩৭৩ টি। অ্যাটাকিং কপ্টার সংখ্যা ৫৭ টি। যেগুলি সীমিত হলেও পাহাড়ি বা দুর্গম এলাকায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জন্য কার্যকর রয়েছে।
আরও পড়ুন: “সন্ত্রাসবাদ সহ্য করা হবে না”, পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান সৌরভ, জানালেন…..
ভারতের স্থলসেনার ভাণ্ডারে রয়েছে ৪,২০১ টি ট্যাঙ্ক, ১,৪৮,৫৯৪ টি সাঁজোয়া যান এবং ৩,৯৭৫টি হালকা কামান ও ২ ৬৪টি মোবাইল রকেট সিস্টেম। এই বিশাল স্থলভিত্তিক অস্ত্রভাণ্ডার ভারতকে কেবল সীমান্ত রক্ষা নয়, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত অভিযানের জন্যও প্রস্তুত করে রেখেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের স্থলসেনার হাতে রয়েছে ২,৬২৭টি ট্যাঙ্ক, ১৭,৫১৬ টি সাঁজোয়া যান এবং ২,৬২৯ টি হালকা কামান। মোবাইল রকেট সিস্টেমের সংখ্যা ৬০০, যা সংখ্যাগত দিক থেকে ভারতের চেয়ে বেশি। এটি পাকিস্তানের (Pakistan-India) কৌশলগত পরিকল্পনায় রকেট সিস্টেমকে গুরুত্ব দেওয়ার দিকটি প্রকাশ করে।
এছাড়াও, ভারতীয় নৌসেনার কাছে রয়েছে ২৯৩ টি যুদ্ধজাহাজ। যার মধ্যে ২ টি শক্তিশালী এয়ারক্র্যাফ্ট কেরিয়ারও রয়েছে। সেগুলি হল আইএনএস বিক্রমাদিত্য ও আইএনএস বিক্রান্ত। এই রণতরীগুলি ভারতের সামুদ্রিক সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও রয়েছে ১৮ টি সাবমেরিন, ১৩ টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪ টি ফ্রিগেট, ১৮ টি করভেট এবং ১৩৫ টি টহলদারি জাহাজ। যেগুলি প্রত্যক্ষভাবে সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। অপরদিকে, পাকিস্তানের (Pakistan-India) নৌবাহিনীতে যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা হল ১২১ টি। যদিও তাদের কোনও এয়ারক্র্যাফ্ট কেরিয়ার নেই। তবে রয়েছে ৮ টি সাবমেরিন, ৯ টি ফ্রিগেট, ৯টি করভেট এবং ৬৯ টি টহলদারি ভেসেল। ডেস্ট্রয়ার না থাকলেও সাবমেরিন ও ফ্রিগেট ব্যবস্থাপনায় তারা সক্ষমতা ধরে রেখেছে। এমতাবস্থায়, সামরিক শক্তির নিরিখে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের সামরিক বাজেট থেকে শুরু করে জনবল, অস্ত্রভাণ্ডার এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে ভারত যে পাকিস্তানের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেখুন গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও: