জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়া নয়, মমতার সঙ্গে হাসিমুখে বৈঠকেই সমস্যা! দিলীপকে ফের নিশানা তরুণজ্যোতির

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বুধবার দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরে উপস্থিত হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh), সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে হাসিমুখে বৈঠক করতে দেখা যায় তাঁদের। সেই ছবিই শোরগোল সৃষ্টি করেছে রাজ্য রাজনীতিতে। গতকালই এই নিয়ে সরব হয়েছিলেন তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tewari), সৌমিত্র খাঁয়েরা। বৃহস্পতিবার সকালে ফের একবার বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে নিয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট করলেন পদ্ম নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। সেই সঙ্গেই স্পষ্ট করে দেন, দিলীপ ঘোষকে নিয়ে এটা তাঁর শেষ লেখা।

মমতার সঙ্গে বৈঠকেই আপত্তি! সাফ জানালেন তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tewari)

বিজেপি নেতা এদিন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। লেখেন, ‘গতকাল দিলীপদার জগন্নাথ কালচারাল সেন্টারে যাওয়া নিয়ে আমার ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ কোনও আপত্তি নেই। কারণ ওই কেন্দ্রটি সরকারের টাকায়, অর্থাৎ আমাদের করের টাকায় তৈরি- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত অর্থে নয়। যে কারণে সেখানে যাওয়াটা কোনও সমস্যা নয়। সমস্যা যা, তা হল- হিন্দুদের উপর নির্যাতনের জন্য যিনি সরাসরি দায়ী, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাসিমুখে বৈঠক করা। সেটিকে সৌজন্য বলা হলে, সেই সৌজন্য আমাদের অপমান’।


এদিন মালদা, মুর্শিদাবাদের ঘটনার কথাও টেনে আনেন তরুণজ্যোতি। দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাসিমুখে বৈঠক করা দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক কেরিয়ারে ‘এক ফোঁটা চোনা’ হয়ে থাকল। বিজেপি (BJP) নেতার কথায়, ‘মালদা, মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের উপর সংগঠিত বর্বর হামলার ঘটনায় যার সরকার দায়ী, যার নীরবতা হিংসাকে উৎসাহ দেয়, সেই মমতার সঙ্গে বৈঠককে রাজনৈতিক পরিপক্বতা বলে সাজানো যায় না। ‘এক মণ দুধে এক ফোঁটা চোনা’- এই বাংলার প্রবাদটাই বরং এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জগন্নাথ সেন্টারে যাওয়া নয়, মমতার সাথে হাসিমুখে বৈঠকটাই দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক কেরিয়ারে সেই ‘এক ফোঁটা চোনা’ হয়ে রইল’।

আরও পড়ুনঃ ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গোটা সরকার দিঘায় ছুটি কাটাতে গিয়েছিল’! বড়বাজার অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রাজ্যকে নিশানা শুভেন্দুর

তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tewari) লেখেন, ‘আজ সকালে দিলীপদার একটি প্রেস বিবৃতি শুনলাম। সেখানে তিনি দাবি করলেন, তিনিই নাকি বহুজনকে নেতা বানিয়েছেন এবং অনেকেই আজ তাঁর জন্য কামাচ্ছে। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা জরুরি- নেতা বানানো যায় না, নেতা নির্বাচন করে মানুষ। দলের সংগঠন এবং আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো কখনওই কাউকে নেতা বানায় না, বরং দায়িত্ব দেয়। দিলীপ ঘোষকেও দায়িত্ব দিয়েছিল দল, সংসদেও পাঠিয়েছিল। জননেতা কিনা সেটা ঠিক করে জনতা’।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করায় বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে নিশানা করলেও ২০১৫-২০২৪ সাল অবধি দিলীপ ঘোষ যেভাবে সংগঠনকে চাঙ্গা করার কাজ করেছিলেন, তার তারিফ করেন তরুণজ্যোতি। তখনকার দিলীপ ঘোষের সম্মান করেন ও আগামীদিনেও করবেন বলে জানান তিনি। তবে বর্তমান দিলীপের মধ্যে একটি ‘অহংকার’ দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেন এই পদ্ম নেতা। তাঁর কথায়, “আমি আমি’ করা এক ধরণের রাজনীতিক ব্যাধি, যা এখন তাঁর মধ্যে প্রকট’।

Tarunjyoti Tewari

গতকালের ঘটনার পর অনেকে একুশের বিধানসভা ভোট ও চব্বিশের লোকসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির জন্য দিলীপকে দায়ী করেছেন। যদিও তা মানতে চাননি তরুণজ্যোতি। তিনি লেখেন, ‘অনেকে দেখছি কালকের ঘটনার পর ২০২১ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনী পরাজয়ের দায় দিলীপ ঘোষের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন। এটা ঠিক নয়। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষমতা তাঁর হাতে ছিল না। বরং বলা ভালো, যাঁরা ১৪৮ জন তৃণমূল কংগ্রেসের বিতর্কিত সদস্যকে দলে ঢুকিয়ে, প্রকৃত কর্মীদের বসিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রশ্ন করুন। ভাড়াটে সৈন্য দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। একুশে যাঁরা দলে এসেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই পরে আর থাকেননি। শুধু একজন এসেছিলেন- শুভেন্দু অধিকারী- যার প্রকৃত জনভিত্তি ছিল। বাকিরা ছিল ‘ছাঁট মাল’, যাঁদের দিলীপ ঘোষ কখনও গুরুত্ব দেননি’।

চব্বিশের লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য বলে দাবি করেন এই বিজেপি নেতা। তাঁর কথায়, দিলীপ ঘোষ কোনও ভুল করেননি, এমনটা নয়। তাঁর বহু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিতর্কিত। তবে তিনি যে ভুল করেননি, সেটার দায় তাঁর ঘাড়ে চাপানো হলে তা অন্যায় হবে বলে দাবি করেন তরুণজ্যোতি।

এই বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী এদিন লেখেন, ‘একজন নেতার আসল পরিচয় পাওয়া যায় সংকটকালে। এই সংকটে দিলীপ ঘোষ যদি ভাবেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাসিমুখে বৈঠক করে তিনি বৃহত্তর রাজনীতির খেলায় নামলেন- তাহলে তিনি ভুল করছেন। কারণ সেই মমতার হাতে আমাদের শহীদের রক্ত লেগে আছে। সেই মমতার সাথে এক টেবিলে বসে ‘সৌজন্য’ রক্ষা করা মানে শহীদদের অপমান করা’।

একইসঙ্গে তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tewari) লেখেন, দিলীপ দাবি করেছেন, তিনি অনেককে নেতা বানিয়েছেন ও তাঁর জন্য অনেকেই আজ উপার্জন করছেন। এই বিষয়টির প্রবল বিরোধিতা করেছেন তরুণজ্যোতি। লিখেছেন, ‘মনে রাখা দরকার, রাজনীতিতে যারা এসেছেন, তারা সবাই গরিব ঘরের সন্তান না। হঠাৎ অর্থলাভ থেকে জন্ম নেওয়া দম্ভ আর অভিজাত পরিবার থেকে আসা আত্মবিশ্বাস- এই দু’টোর মধ্যে পার্থক্য আছে। অনেক গরিব ঘরের সন্তান আমাদের দলের আছে। তাঁরাও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু দিয়ে দলটা করে। দিলীপদা তাঁর কথার মাধ্যমে সকলকে অপমান করলেন। টাকার জন্য রাজনীতি করলে মানুষ তৃণমূল করত, বিজেপি নয়। বিজেপি যারা করে তারা আদর্শের জন্য করে। অর্থের অহংকার যখন কারও মধ্যে জন্ম নেয়, তখন মানুষ ভুলে যায়, সম্মান অর্জন করা যায়, কিনে নেওয়া যায় না’।

আরও পড়ুনঃ গরমের ছুটি কাটিয়ে কবে খুলবে স্কুল? দিনক্ষণ জানাল শিক্ষা দফতর? পড়ুয়াদের জন্য বড় খবর

তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tewari) লেখেন, দিলীপ ঘোষকে অনেক মানুষ ভালোবাসত একথা ঠিক, তবে সেই ভালোবাসা এতটাও প্রবল ছিল না যে কেউ নিজের প্রাণ দিয়ে দেবে। তবে গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাসিমুখে বৈঠকের পর সেই ভালোবাসাটুকুও বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হারিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

সবশেষে তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tewari) লেখেন, ‘আপনি যেটা করেছেন সেটা অন্য কেউ করলে হয়তো কষ্টটা কম হতো। কিন্তু আপনি করেছেন বলেই খারাপ বেশি লাগছে। আমি নিজেও ভাবিনি কোনওদিন আপনাকে নিয়ে এইভাবে লিখব। কিন্তু আপনি বাধ্য করেছেন। ভালো কাজ করলে আবার সমর্থন করব, তবে দুটো জিনিস আর হবে না- ১. আপনাকে আর নেতা মানতে পারব না। ২. গতকালের সেই বৈঠককে কখনোই সমর্থন করতে পারব না। বিশ্বাস করুন, আপনাকে নিয়ে এটা আমার শেষ লেখা’।

Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

X