বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য (Government of West Bengal)। এবার তাতেই উচ্চ আদালতের নির্দেশ খারিজ করে দিল এদেশের সর্বোচ্চ আদালত। শিক্ষিকার বদলি সংক্রান্ত একটি মামলায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) যা হল…
জানা যাচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে ঘাটালের রবীন্দ্র শতবার্ষিকী কলেজে পড়ান এক শিক্ষিকা। তাঁর বাড়ি থেকে সেই কলেজের দূরত্ব প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার। ওই শিক্ষিকা জানান, এতদূরের কলেজে পড়াতে যেতে হয় বলে বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখতে সমস্যা হচ্ছে। সেই কারণে বাপের বাড়ির কাছের একটি কলেজে বদলি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। একটি জনস্বার্থ মামলা করেন।
ঘাটালের ওই কলেজ থেকে উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়া শ্রী চৈতন্য কলেজে ট্রান্সফার (Transfer) চেয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। তাঁর আবেদন মেনে নেয় উচ্চ আদালত। রাজ্যের আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছিলেন, শিক্ষিকার বদলির এই বিষয় কি আদৌ জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত? যদিও সেই যুক্তি মানেনি হাইকোর্ট। ওই শিক্ষিকাকে বাপের বাড়ির কাছের একটি কলেজে বদলির নির্দেশ দেয় আদালত।
আরও পড়ুনঃ রথের আগেই দুয়ারে জগন্নাথদেবের প্রসাদ! কীভাবে হাতে পাবেন? অভিনব উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের
এরপর এই ইস্যু পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্ট অবধি। উচ্চ আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সেখানে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের জোরালো বিরোধিতা করেন রাজ্যের আইনজীবী। দাবি করেন, একজন শিক্ষিকা (Teacher) কোথায় কাজ করবেন, সেটা তাঁর অধিকার অথবা পছন্দ হতে পারে না। এই বিষয়ে নিয়োগকর্তার কাছে সম্পূর্ণ অধিকার আছে। এমনকি আদালতও তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। পাশাপাশি বলা হয়, এটি জনস্বার্থও নয়।
পাল্টা ওই শিক্ষিকা বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখার আবেদন করেন। বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনা করার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেন তিনি। যদিও সেই আর্জি শোনেনি এদেশের সর্বোচ্চ আদালত। উল্টে বদলির বিষয়ে আদৌ আদালতের হস্তক্ষেপ করার এক্তিয়ার রয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত জানায়, ব্যক্তিগত কারণ দেখে এভাবে বদলির নির্দেশ দেওয়া হলে আগামী দিনে বিষয়টি ঠেকানো যাবে না। আরও অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এমন কারণ দেখিয়ে বদলি চাইবেন। এতে পড়াশোনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া ওই শিক্ষিকাকে যদি বদলি করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কলেজের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়বে। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা।
সুপ্রিম নির্দেশের পর ওই শিক্ষিকার আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, ‘সরকার নতুন নিয়োগ না করলে এভাবে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত দেখিয়ে সব ট্রান্সফারই বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষকরা কোনও কারণ দেখিয়েই বদলি নিতে পারবেন না। এই দিকটাও সুপ্রিম কোর্ট খতিয়ে দেখতে পারতো’।
উল্লেখ্য, কখনও স্কুল, কখনও আবার কলেজ শিক্ষক-শিক্ষিকার বদলি নিয়ে নানান সময় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এবার এমনই একটি মামলায় হাইকোর্টের আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। সেই সঙ্গেই বদলির বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করার এক্তিয়ার আদৌ রয়েছে কিনা সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত।