বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এসএসসি কাণ্ডে (SSC Recruitment Case) চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। শুক্রবার তাতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অবধি এই স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে। এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Justice Amrita Sinha) এই নির্দেশ দেওয়ার পরেই এই নিয়ে রাজ্যকে একহাত নেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম (Firdous Samim)। তাঁর কটাক্ষ, ‘এটা পিঠ বাঁচানোর স্কিম ছিল’।
শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতিতে অনেক হেভিওয়েট জড়িত! দাবি শামিমের (Firdous Samim)
২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের পর চাকরিহারা গ্রুপ সি কর্মীদের জন্য মাসিক ২৫,০০০ টাকা ও গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য মাসিক ২০,০০০ টাকা ভাতা ঘোষণা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এরপর সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা হয়। এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে এদিন অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। ৪ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য হলফনামা দেবে। তার ১৫ দিনের মধ্যে পাল্টা হলফনামা দেবেন মামলাকারীরা। এদিন এই নির্দেশের পরেই রাজ্যকে নিশানা করেন শামিম।
অভিজ্ঞ এই আইনজীবী বলেন, ‘রাজ্যের সিদ্ধান্তটা শিক্ষাকর্মীদের জন্য ছিল। যারা সাদা খাতা জমা দিয়ে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-র চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের কেন টাকা দেওয়া হবে?’ তাঁর দাবি, শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকারি আধিকারিক থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার সদস্য, অনেকে জড়িত। দুর্নীতির সঙ্গে যারা যুক্ত, তাঁদের থেকে টাকা আদায়ের নির্দেশ ছিল। সেই নিয়েও এখনও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি রাজ্য।
আরও পড়ুনঃ ঝড়বৃষ্টি থেকে সাময়িক বিরতি, শুক্র-শনিতে ‘হাওয়া বদলে’র পূর্বাভাস! ফের বাড়বে গরম?
শামিমের কথায়, ‘টাকা কীভাবে আদায় করতে হবে, সেকথা বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল। জেলাশাসকের উপর তখন নির্দেশ ছিল, ল্যান্ড রেভিনিউ হিসেবে ওই টাকা আদায় করতে হবে। সেই নিয়ে এখনও অবধি কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি’।
এখানেই না থেমে আইনজীবীর আরও দাবি, সাদা খাতা জমা দিয়ে অথবা প্যানেলের মেয়াদ শেষের পর যারা চাকরি পেয়েছেন, সিবিআই (CBI) তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেকের নাম বেরিয়ে আসতে পারে। সেই জন্য মুখ বন্ধ করতে ঘুরপথে টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। ‘এটা পিঠ বাঁচানোর স্কিম’ বলে তোপ দাগেন তিনি।
শামিমের কথায়, ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। যেটা করা যায় না। কারণ এটা জনগণের করের টাকা। এই টাকা দিয়ে আসলে ওদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। কারণ সিবিআইকে একটা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যে চাকরিপ্রার্থীরা সাদা খাতা জমা করে চাকরি পেয়েছেন, প্যানেলের মেয়াদ শেষের পর চাকরি পেয়েছেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সি চাইলে তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও অনেক নাম বেরোতে পারে। সেই জন্য মুখ বন্ধ করতে ঘুরপথে টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল’।
আরও পড়ুনঃ চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা মাসিক ভাতা পাবেন? বড় নির্দেশ দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল ২০১৬ সালের এসএসসির (SSC) সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরপর ‘অযোগ্য’ অথবা ‘দাগি’ হিসেবে চিহ্নিত নন, এমন শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর অবধি বিদ্যালয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। তবে শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে পুরনো নির্দেশই বহাল ছিল।
গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেছিল রাজ্য। শুক্রবার সেই সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপরেই এই নিয়ে রাজ্যকে নিশানা করেন শামিম (Firdous Samim)। রাজ্য ও মামলাকারীরা হলফনামা দেওয়ার পর এই ইস্যু কোনদিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার।