বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, বিকলাঙ্গ বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারাল ৯ বছরের খুদে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: একটা দুর্ঘটনা, আর তাতেই সব শেষ! বিকলাঙ্গ বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই প্রাণ হারাল মাত্র ৯ বছরের এক বালক। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) হরদা জেলার কাছে বারখেদার আতশবাজির কারখানায় ঘটা বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় আশিস রাজপুত। আর তারপরেই গোটা পরিবারে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। নিজের জীবন দিয়ে ছেলে যেভাবে তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল সেটা ভেবেই আরও কষ্ট পাচ্ছেন আশিসের বাবা সঞ্জয় রাজপুত।

তিনি জানান, “আশিসের বয়স যখন এক মাস, একটা দুর্ঘটনা আমাকে শয্যাশায়ী করে ফেলে। ওর ২ মাস বয়সে যখন প্রথমবার আমার আঙুল ধরেছিল, তখন আমি অনুভব করেছি যে আমি এখন ভরসা পেয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমাকে হুইলচেয়ারে বসে থাকতে দেখেছে। খুব কঠিন সময়ে ও বড় হয়েছিল। খেলার বয়সেই সে আমার ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন আমি কার ভরসায় বাঁচবো?” গত শনিবার সিওনি মালওয়ার শিবপুর গ্রামে অত্যন্ত শোকাবহ পরিবেশে আশিসের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

A 9-year-old boy lost his life trying to save his father

হাসপাতালে বাবাকে দেখিয়ে ফিরছিল আশিস: গত ৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যপ্রদেশের হরদা জেলার কাছে বারখেদার আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটার সময়ে আশিস তার বাবাকে হাসপাতালে দেখিয়ে ফিরছিল। সে তার বাবাকে স্কুটার থেকে নেমে হুইলচেয়ারে উঠতে সাহায্য করার সময়েই ওই বিস্ফোরণ ঘটে এবং পাথর মিসাইলের মতো উড়তে শুরু করে। সেই সময়ে আশিসের মাথায় একটি পাথর লেগে যাওয়ায় সে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সঞ্জয়ের হাতেও পাথরের আঘাত লাগে। প্রথমে দু’জনকেই নর্মদাপুরমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু আশিসের অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ভোপাল এইমস-এ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই গত শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: “এটা ব্যবসা নয়”, প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করা স্টার্টআপকে বেমালুম “রিজেক্ট” করলেন আমন, অবাক করবে কারণ

এখনও পর্যন্ত মৃত ১৩: এরপর থেকেই প্রতিবন্ধী বাবার কান্না আর থামছে না। এদিকে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল আশিসের জন্মদিন। সঞ্জয় জানান, “আমি একজন ড্রাইভার। আশিস ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বুদনির কাছে একটি দুর্ঘটনায় আমার শরীরের নীচের অংশ অবশ হয়ে যায়। অন্যের চোখে আমার শরীর আমাকে সমর্থন করা বন্ধ করে দিলেও, আশিস আমাকে ছোটবেলা থেকেই অন্যভাবে দেখেছে। আমি তার বাবা ছিলাম। সে পরিবারের কষ্ট এবং আমার সমস্যা বুঝত। আমি দোকানে বসে ক্লান্ত হয়ে পড়লে আশিস দোকান দেখভাল করত। ছেলে চলে যাওয়ার পর আমরা এখন কি করব কিছুই জানিনা।”

আরও পড়ুন: কাতারের সাথে বড় “ডিল” ভারতের! আরও ২০ বছরের জন্য আমদানি হবে LNG, হল ৭৮ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি

কারখানার দুই ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: এদিকে, আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণের চতুর্থ দিনে গত শনিবার আরও দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচজনকে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত আশিস তামখানে ও আমান তামখানে দু’জনেই কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করত।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর