বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কৃষকের দারিদ্র্যের দুর্গতি বদলাতে গেলে বদলাতে হবে কৃষি পদ্ধতি। তা না হলে, এই বিশ্বায়নের যুগে দুর্দান্ত মূল্যবৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে লাভের আশা করা দুষ্কর। আর পদ্ধতিতে বদল আনতে চাই উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক। সেই অগ্রগতির যাত্রাতেই এক বড় মাইলফলক স্থাপন করল বঙ্গ তনয় শৌর্যদীপ বাসাক।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিটেক ডিগ্রি লাভ করার পর ‘প্রাইস ওয়াটার কুপার্স’-এর মত বড় সংস্থায় নিরাপদ চাকরি দিয়েই শুরু হয়েছিল জীবন। কিন্তু মাথায় ঘুরছে নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করার ইচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই সহপাঠি লভকেশ বালচন্দানীকে সঙ্গী করে চাকরি ছেড়ে আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেন শৌর্যদীপ। এমটেক করেন রিনিউয়েবল এনার্জি বা অপ্রচলিত শক্তির উপর। এম টেকের প্রজেক্ট হিসেবেই বেছে নেওয়া ‘হাইড্রোপনিক ফার্মিং’কে। হাইড্রোপনিক ফার্মিং-এর জন্মদাতা ইজরায়েল।
এই পদ্ধতিতে বেশকিছু নতুন পরিবর্তন এনেছেন এই বঙ্গতনয়। যার জেরে বর্তমানে মাটির কোন প্রয়োজন নেই, আলো এবং জল-হাওয়ার মাধ্যমেই কয়েক গুণ বাড়ানো যাবে বীজের ফলন। শুধু তাই নয় এর জেরে এক কেজি বীজ ৮ দিনেই পরিণত হবে ৭-৮ কেজি চারায়। শৌর্যদীপের মতে এই প্রযুক্তি অনেক বেশি পরিবেশ বান্ধব। শুধু তাই নয় এতে জলের সাশ্রয় হয় প্রায় ৯৫%।
আর সাধারন চাষের পদ্ধতি তুলনায় ফলনও অনেক বেশি। ইতিমধ্যেই ইউকে এড’ ও ‘আইকেইউএ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত ‘এফিসিয়েন্সি ফর অ্যাকসেস ডিজাইন চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় শৌর্যদীপদের মডেল জিতে নিয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো সৌর বিদ্যুৎ শক্তির মাধ্যমেও যন্ত্রটি চালানো সম্ভব।
শৌর্যদীপ জানিয়েছেন প্রতিটি ইউনিট তৈরি করতে খরচ পড়ছে সাত থেকে আট হাজার টাকা। তার আবিষ্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমে কোন শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী যেকোনো পরিস্থিতি এবং আবহাওয়াতে বীজের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। তাদের আবিষ্কৃত যন্ত্র এমন একটি মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়েছে যা ‘অ্যাভাপারেটিভ কুলিং’ করতে সক্ষম।
শৌর্যদীপ জানাচ্ছেন প্রথম একদিন বস্তায় রাখলে অঙ্কুরোদগম হবে বীজগুলির বইয়ের সেলফের মত স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখতে হবে। এই যন্ত্র ব্যবহার করলে ৭ থেকে ৮ দিনে ১ কেজি বীজ থেকে ৮ কেজি মত চারা পাওয়া যাবে। এই যন্ত্রেই জল এবং আর্দ্রতার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশের ৯০ শতাংশ চাষিই ছোট ও প্রান্তিক। অর্থাৎ, জমির পরিমাণ খুব কম। মেকানাইজড ফার্মিংয়ের সুযোগ নেই। এঁদের কপাল খুলে দিতে পারে হাইড্রোপোনিক ফার্মিং।”