বাংলা হান্ট ডেস্ক: এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণ কিংবা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য দায়ী যথেচ্ছ হারে বৃক্ষচ্ছেদন। বড় বড় গাছ কেটে লাগাতার বহুতল বানানোর জন্য এই মুহূর্তে ভয়ংকর বিপদের মুখে গোটা বিশ্ববাসী। কিন্তু তাদের মধ্যে থেকেই ব্যতিক্রমী সুন্দরবন (Sundarban) এলাকার আকুল বিশ্বাস (Akul Biswas)। দৃষ্টিশক্তি হারালেও তাঁর মনের জোর অনেক বেশি। অনেক দিন আগেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন সুন্দরবন বাঁচলে তবেই রক্ষা পাবে পৃথিবী। তাই নিজেকে ভালবাসার আগে ভালবাসতে হবে পরিবেশকে ।
বাসন্তীর ঝড়খালির বাসিন্দা আকুল বিশ্বাস অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই দুই চোখে গ্লুকোমা হওয়ায় চিরতরে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। তবে তারপর আর লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। এখন সুন্দরবনকে বাঁচানোই তাঁর জীবনের মূল ব্রত। ২০০৫ সাল থেকে বিদ্যাধরী নদীর তীরে ম্যানগ্রোভের (Mangrove) চারা রোপণ শুরু করেন তিনি। তাঁর কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয়রাও তাঁর সাথে এই কাজে যোগ দেন।
এই মুহূর্তে তিনি ২০০ জনের বেশি মহিলাদের নিয়ে ঝাড়খালি সবুজ বাহিনী গঠন করেছেন। যা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ এলাকার উন্নতি করার কাজ করে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ঝাড়খালীর মহিলারা ম্যানগ্রোভের বীজ সংগ্রহ করেন এবং নার্সারি ব্যাগে জমা করে তাদের দিন শুরু করেন। তাদের এই সময়োপযোগী পদক্ষেপ প্রকৃতির রোষ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
সাধারণত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই বৃক্ষরোপণ করা হয়ে থাকে। এই কাজের সাথে যুক্ত প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবক দিনে প্রায় দুই ঘন্টা করে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০-টি গাছ রোপন করে থাকেন। মোট ২৩ টি গ্রামে ছড়িয়ে থাকা এই ২০০ জন সদস্যরা অন্ধ আকুল বিশ্বাসের নির্দেশনায় এ পর্যন্ত লক্ষাধিক ম্যানগ্রোভের চারা রোপন করেছেন। এই ম্যানগ্রোভ বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে ঢাল হিসাবে কাজ করে থাকে।
আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেনই লেট সাড়ে ৮ ঘণ্টা! শিয়ালদায় নজিরবিহীন কাণ্ড, তারপর যা করল যাত্রীরা …
এই ম্যানগ্রোভের কারণেই বন্যার সময় নদীর বাঁধ সুরক্ষিত থাকে। কারণ তাদের শিকড় মাটি ধরে রাখে এবং ভূমিধ্বস প্রতিরোধ করে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে এলাকায় যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে কথা লক্ষ্য করার পরেই স্থানীয় বাসিন্দা আকুল বিশ্বাস স্থানীয়দের মধ্যে ম্যানগ্রোভ রোপনের বিষয়ে অবগত করে তোলেন। বেশিরভাগ স্থানীয় মানুষজন ঝাড়খালির সবুজ বাহিনীর প্রচেষ্টা উপকারী বলে জানিয়েছেন।
এই প্রকল্পের মূল কান্ডারী আকুল বিশ্বাস বলেছেন, ‘যখন ঘূর্ণিঝড় ইয়স ২০২১ সালের মে মাসে আছড়ে পড়েছিল তখন বেশ কিছু উপকূলীয় এলাকা বন্যায় ভেসে গিয়েছিল।’ জানা গিয়েছে জেএসবি এবং বন বিভাগ উভয়ের প্রচেষ্টায় এখনও পর্যন্ত ১০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে বছরে প্রায় ৫,০০,০০০ ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ করা হয়েছে।