বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘদিন ধরেই রেশন দুর্নীতির (Ration Scam) মামলায় সরগরম রাজ্য। ইতিমধ্যেই এই মামলায় জেলে বসে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriya Mullick)। এবার এই রেশন দুর্নীতি মামলায় এসেছে নতুন মোড়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে এসেছে একটি মেরুন ডায়েরি (Maroon Dairy)। সেই ডায়েরীর দুর্বোধ্য সাংকেতিক ভাষায় লেখা রয়েছে বিভিন্ন হিসাব।
পর্দা ফাঁস রেশন দুর্নীতির (Ration Scam) বড় সিন্ডিকেটের
কিছুদিন আগে এই রেশন দুর্নীতির (Ration Scam) মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ সুব্রত ঘোষ ও হৃতেশ চন্দক নামে দুই চাল কলের মালিকসহ শান্তনু ভট্টাচার্য নামের একজন চ্যাটার অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বর্তমানে ওই তিনজনই রয়েছে ইডির হেফাজতে। তদন্ত থেকে জানা যাচ্ছে এই তিন মূর্তি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের রেশন দুর্নীতি চক্রের সিন্ডিকেটের একটি অংশ।
ওই ডায়েরিতে সাংকেতিক ভাষায় অজস্র ভুয়ো চাষী এবং ও সংস্থার নামের প্রথম অক্ষর লিখে এই সিন্ডিকেটের আর্থিক লেনদেনের সমস্ত খুঁটিনাটি বিবরণ উল্লেখ করা রয়েছে। ইডির তদন্তকারীদের কথায় স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্রে দাবি করা হচ্ছে এই দুর্নীতির (Ration Scam) টাকা নাকি ইতিমধ্যে দুবাইয়ে সরানো হয়েছে। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক অভিজিৎ দাসের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ওই মেরুন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছিল।
ওই ডায়েরির পরতে পরতে রেশন বন্টন কেলেঙ্কারি সিন্ডিকেটের সমস্ত ফিরিস্তি তদন্তকারীদের সাহায্যে ধীরে ধীরে ফাঁস হতে শুরু করেছে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নির্দেশেই চাষীদের কাছ থেকে রাজ্য সরকারের ধান কেনার সহায়ক মূল্যের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল। সেই সমস্ত বিবরণ ওই ডাইরিতে সাংকেতিক ভাষায় লেখা রয়েছে। ধীরে ধীরে সবকিছু পরিষ্কার হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত দীর্ঘ এক দশক ধরে অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তার ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেট রাজ্য সরকারি তহবিলের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি ভুয়া চাষীদের নামে কয়েক হাজার হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। অথচ ওই সমস্ত চাষীদের কাছ থেকে কোন ধানই কেনা হয়নি।
আরও পড়ুন: নথি নিয়ে বাড়ছে চিন্তা!
রাজ্য সরকারের ধান কেনার সহায়ক মূল্য ওই সমস্ত চাষীদের কয়েক হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বছরের পর বছর ধরে সরাসরি জমা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ওই ডায়েরি থেকে জানা যাচ্ছে, ডেবিড কার্ডের মাধ্যমে সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ টাকা তুলে নানান সংস্থায় পাচার করা হয়েছে। তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান ধৃত দুই চালকল মালিক সুব্রত এবং হৃতেশ অ্যাকাউন্টে সরকারি টাকা জমার ক্ষেত্রে জড়িত। অন্যদিকে শান্তনু ওই টাকা সরানোর মূল মাথা।
শুধু তাই নয় তদন্তকারী অফিসারদের দাবি জ্যোতিপ্রিয় এবং তার পরিবারের লোকেদের অধীনস্থ মোট তিনটি সংস্থায় লুটের টাকার একটি বড় অংশ জমা হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রী-কন্যার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও রাজকোষ লুটের কোটি কোটি টাকার হদিস মিলেছে। যদিও ওই অ্যাকাউন্টের কোটি কোটি টাকার উৎসের হদিস দিতে পারেননি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রী এবং কন্যা। একই সাথে এদিন তদন্তকারীদের দাবি ভুয়ো চাষী পরিচয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করার টাকা নাকি সরকারি হাওয়ালা মারফত বিদেশেও নগদে পাচার করা হয়েছে। সেখানে নানান সংস্থা খুলেও টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে বলেই তথ্য মিলেছে।