বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলায় একের পর এক দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন দেন ঐতিহাসিক রায়। নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই কিংবা ইডিকে তদন্তের দায়ভার প্রদান থেকে শুরু করে মন্ত্রীকন্যাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত; বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে বঙ্গবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। যদিও অপরদিকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে। গতকাল একটি সাক্ষাৎকারে এ সকল প্রসঙ্গ উঠতেই অভিজিৎবাবুর সাফ জবাব, “মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়ে চলেছে, সেই কারণে সিবিআই দিতে হয়েছে।” একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) নিয়েও একাধিক মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে এসএসসি থেকে শুরু করে প্রাথমিক টেট এবং অন্যান্য নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় একের পর এক অভূতপূর্ব রায় দিয়ে চলেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত ১০ মাসে বদলি এবং নিয়োগ সংক্রান্ত মোট ১০ টি মামলায় তিনি সিবিআইয়ের হাতে তদন্তের দায়ভার তুলে দিয়েছেন।
একদিকে যখন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এহেন রায় নিয়ে তাঁর প্রশংসায় মেতেছে অসংখ্য মানুষ, আবার অপরদিকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির ওপর দায়িত্ব চাপানোয় শাসক দলের অনেক নেতা মন্ত্রীদেরই সমালোচনা ভেসে এসেছে তাঁর দিকে। তবে শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থার হাতে তদন্তের দায়িত্ব চাপানোই নয়, একইসঙ্গে সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি সমস্ত টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন অভিজিৎবাবু।
উল্লেখ্য, বর্তমানে অভিজিৎবাবুর নির্দেশের কারণেই মোট ১৮৭ জন চাকরি প্রার্থী শিক্ষকতার চাকরি পেতে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে গতকাল একটি সাক্ষাৎকারে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে যারা জালিয়াতি করে প্রবেশ করছে, তারা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোন মূল্যবোধ দেবে? যারা জালিয়াতি করে এবং অসৎ উপায়ে চাকরি পেয়েছেন, তাদের সকলের চাকরি যাবে। একবার যদি দুর্নীতি ধরা পড়ে, তাহলে চাকরি যেতে বাধ্য।”
সাম্প্রতিক সময়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক রায় নিয়ে মাঝেমধ্যেই মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের। সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেন তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক মামলায় সিবিআই এবং ইডির ওপর তদন্তের দায়ভার চাপানোর ফলে শাসক দল যে তাঁর প্রতি রুষ্ট, তা বলা বাহুল্য।
এই পরিস্থিতিতেও নিজের কাজের প্রতি অনড় অভিজিৎবাবু। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেই সেই বিচারপতি প্রোজেক্টেড হবেন। আমাকে যদি জুডিশিয়ারি থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়, তাও আমি মনে করি যে, আমি যা করেছি ঠিক করেছি। রুপোর চামচ মুখে দিয়ে জন্মাইনি। বেকার জীবন কি, তা আমার জানা আছে। অন্তত অফিসারদের মনে একটা আতঙ্ক তৈরি করা গিয়েছে। কেউ এবার থেকে বেনিয়ম করলে পার পাবে না।”