শহীদ দাদা রাজেশ ওরাং এর বদলা নিতে সেনায় যোগ দিতে চান ভাই অভিজিৎ ওরাং

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ” যেদিন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, সেদিন আমায় নাইবা মনে রাখলে” রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গান। আজ তা সত্যি হল। গ্রামের মাতৃভূমিতে পড়বে না পা। পিছন ফিরে দেখবে না ভালোবাসার জনকে। নাই বা থাকলো রক্তের সম্পর্ক, কিন্তু দেশ মায়ের সেবা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন তরতাজা বীরভূমের রাজেশ ওরাং, আলিপুরদুয়ারের বিপুল রায়।

দীর্ঘ অপেক্ষার পরিসমাপ্তী! ‘রিয়েল হিরো’ গ্রামে ফিরলেন কফিনবন্দী হয়ে। চোখের জলে বীর শহীদ রাজেশ ওরাং ও বিপুল রায়কে শ্রদ্ধা জানালেন অসংখ্য মানুষ। ‘চীনের বিরুদ্ধে বদলা চাই’ গর্জে উঠলো আট থেকে আশি সকলে। জয়ধ্বনী উঠলো ভারতীয় সেনার নামে। এদিন অবশ্য মন্ত্রী থেকে সাংসদ, শাসক থেকে বিরোধী সবাই রাজনৈতিক মত পার্থক্য ভুলে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে শহীদ রাজেশ ওরাং ও বিপুল রায়কে শ্রদ্ধা জানালেন।

ladakh 1

স্বজন হারানোর যন্ত্রণায় ফুঁসছেন রাজেশের ভাই অভিজিৎ ওরাং। তিনি বলেন, ‘বদলা চাই। উচিত শিক্ষা দিতে হবে। তাতে যুদ্ধ হলে আমিও যেতে প্রস্তুত।’ অভিজিতের বুকেও যে শোকের আগুন।

ভারত চীন যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন বীরভূমের মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়া গ্রামের যুবক রাজেশ ওরাং ও আলিপুদুয়ারের বিপুল রায়। মঙ্গলবার বিকেলে তার বাড়িতে ফোন আসে ‘রাজেশ আর নেই’। দাবানলের মতো খবরটা ছড়িয়ে পরেছিলো গ্রাম থেকে সর্বত্র। সোস্যাল মিডিয়ায় রাজেশকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছিল। এদিকে বাবা-মা, আত্মীয় পরিজন সকলে অপেক্ষা করছিলেন কখন বাড়ির ছেলের ‘মরদেহ’ আসবে। প্রতিক্ষা দির্ঘ থেকে দির্ঘতর হচ্ছিল। এদিকে নাওয়া খাওয়া ভুলে বুকভাঙা হাহাকার করে কাঁদছিলেন মা মমতা ওরাং। ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পরেছেন রাজেশের বাবা। অপেক্ষা করছিলেন শুধু বেলগড়িয়া গ্রামের মানুষ নয়। সমস্ত জেলার মানুষ।

la j

শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার অবসান হলো শুক্রবার সকালে। সেনাবাহিনীর জওয়ানরা পৌঁছালেন ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে কফিন বন্দী শহীদ রাজেশ ওরাং এর মরদেহ নিয়ে। শহীদ রাজেশ ‘অমর রহে’, ভারতীয় সেনার নামে জয়ধ্বনী দিতে থাকেন তারা। এদিকে আগের রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই কাতারে কাতারে মানুষ জমায়েত হতে থাকেন গ্রামে। রাজেশের পার্থিব শরীর নিয়ে সেনাবাহিনী পৌঁছান গ্রামের মাঠে। সেখানেই নামানো হয় কফিন বন্দী দেহ। নিয়ম মেনে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের দুই মন্ত্রী আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রনাথ সিনহা, লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী, বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ সহ শাসক বিরোধী দলের একাধিক সাংসদ বিধায়ক ও নেতারা।

llll j

 

বিপুলের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার বাড়িতে। রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামের মহিলারা হাউ-হাউ করে কাঁদতে থাকেন। স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকেন তারা। আর কফিনবন্দী বিপুলের দেহ বাড়ির উঠানে নামাতেই বাঁধভাঙা কান্না বাবা মা ভাই বোন আত্মীয়দের। সেখানে বেশ কিছুক্ষন রাখা হয় মরদেহ। তারপরই বাড়ি থেকে শহীদের দেহ নিয়ে রওনা হয় গ্রাম ঢোকার মুখে মুখাগ্নী করার জায়গার উদ্দেশ্যে।

এদিন সকলেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি মতস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে কে সঙ্গে নিয়ে রাজেশের বাড়িতে যান। বদলা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনুব্রত মন্ডল। তিনি বলেন, “এতগুলো প্রান চলে গেলো। এর বদলা নিতে হবে চীনকে যোগ্য জবাব দিতে হবে”। এদিন তৃণমূলের পক্ষ্য থেকে পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হয়। পরে রাজ্য সরকারের পক্ষ্ থেকেও আর্থিক সাহায্য করা হয়। শহীদ দাদা রাজেশ ওরাং এর বদলা নিতে সেনায় যোগ দিতে চান অভিজিৎ ওরাং।

ko

সারা গ্রামে থেকে শুধু আবেগজনিত কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে অমর রহে অমর রহে। শহিদের রক্ত হবে না ব্যর্থ। গান সেলুটের মাধ্যমে শহিদদের দেওয়া হয় সম্মান। ঘরের ছেলে ঘর থেকে যেন বেরোতে দেবে না গ্রামবাসী। তারাই শহিদ রাজেশ ওরাংয়ের গ্রামে তৈরি করেছেন ‘সমাধি ক্ষেত্র’। বুক ফাটা কান্নায় যেন ফেটে পড়েছে সারা গ্রাম। আলিপুরদুয়ারে বিপুল রায়ের দেহ নিথর দেহ কফিনে করে চলে এসেছে।

মোকিনার দুই ছেলে আমিনুল ও মোশারফ চাকরি করতেন সেনাবাহিনীতে। কার্গিল যুদ্ধের সময় বিএসএফ জওয়ান দুই ভাই-ই ছিলেন কাশ্মীরে। দাদা আমিনুল উঠেছিলেন কালাকুট সেক্টরের উপরে। সেখানেই পাক সেনার বুলেটে মৃত্যু হয় আমিনুলের। ছোট ভাই মোশারফ তখন খানিকটা নীচে ডিউটি করছিলেন। তাঁর চোখের সামনেই পাহাড় থেকে নেমে এসেছিল দাদার ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই ঘটনার পর সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন মোশারফ।

সম্পর্কিত খবর