বাংলা হান্ট ডেস্ক: বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনকুবের তথা টেসলা এবং স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক (Elon Musk) প্রায় সবসময়েই খবরের শিরোনামে থাকেন। এমতাবস্থায়, ফের একবার তিনি উঠে এলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্ধুতে। সম্প্রতি, ইলন মাস্ক একটি বড়সড় দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কোম্পানি নিউরালিঙ্ক (Neuralink) আগামী ৬ মাসের মধ্যে মানুষের মস্তিষ্কে চিপ ইমপ্ল্যান্ট করবে। এদিকে, তাঁর এহেন বক্তব্য সামনে আসার পরই তা সর্বত্র সাড়া ফেলেছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ২০২১ সালে নিউরালিঙ্ক দাবি করেছিল যে, তারা একটি বানরের মস্তিষ্কে চিপ ইমপ্ল্যান্ট করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি, সেই সংক্রান্ত ভিডিওটিও শেয়ার করে নিউরালিঙ্ক।
এমতাবস্থায়, গত বুধবার ইলন মাস্ক নিউরালিঙ্কের একটি শোতে বলেন যে সংস্থাটি মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। বেশিরভাগ কাগজপত্র ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রায় ৬ মাসের মধ্যেই এই কাজে সাফল্য অর্জন করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
জন্ম থেকেই যাঁরা অন্ধ তাঁরা ফিরে পাবেন দৃষ্টিশক্তি: এই প্রসঙ্গে দ্য স্ট্রিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস্কের মতে, সংস্থার প্রাথমিক লক্ষ্য হল দৃষ্টিহীন ব্যক্তি এবং প্যারালাইসিসকে নিরাময় করা। মূলত, নিউরালিঙ্কের সাহায্যে যাঁরা জন্ম থেকেই অন্ধ তাঁদের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। পাশাপাশি নিউরালিঙ্কের প্রযুক্তি মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙার কারণে সম্পূর্ণভাবে পঙ্গু হয়ে পড়া মানুষদের ফের স্বাভাবিক করতেও সহায়ক হবে মনে করা হচ্ছে। মাস্ক আরও বলেন, “আজ মানুষের কাছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাথে প্রতিযোগিতা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং এর ঝুঁকি কমাতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।” তাঁর মতে, “শুধুমাত্র ল্যাপটপ এবং ফোনের সাথে যোগাযোগ সাধন করা মানুষের ক্ষমতা খুবই সীমিত।”
নিউরালিঙ্ক প্রাণীদের মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করেছে: এখনও পর্যন্ত মনে করা হয়েছিল যে, মাস্কের ব্রেন মেশিন ইন্টারফেস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি নিউরালিঙ্ক প্রাণীদের মস্তিষ্কে চিপ ইমপ্ল্যান্টের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে, সংস্থার উদ্দেশ্য হল এটিকে মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করে এর ক্ষমতা বাড়ানো এবং মানুষের মস্তিষ্ক কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা। এমতাবস্থায়, মাস্কের মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কে চিপ ইমপ্ল্যান্টের দাবি সবাইকে অবাক করেছে।
শূকরের মস্তিষ্কেও চিপ ইমপ্ল্যান্ট হয়েছে: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ইতিমধ্যেই নিউরালিঙ্ক জানিয়েছে, পেজার নামের এক বানরের মস্তিষ্কে তারা এই চিপ স্থাপন করেছিল। যার মাধ্যমে বানরটি ভিডিও গেম খেলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাভাবিক কাজকর্মও করেছে। পাশাপাশি, নিউরালিঙ্ক জানায় যে শূকরের মস্তিষ্কেও অনুরূপ একটি চিপ ঢোকানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ২০১৬ সালে শুরু হওয়া নিউরালিঙ্কের প্রাথমিক দলের অনেক সদস্য ইতিমধ্যেই এই কোম্পানি ছেড়ে গেছেন। এদিকে, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ এই চিপের হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমতি পেয়েছিলেন মাস্ক। যদিও, এই পরিকল্পনায় দুই বছর সময় নেন তিনি।
সবার চোখ রয়েছে এই দিকে: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নিউরালিঙ্কের এই কাজ এখন সারা বিশ্বের মানুষের নজরে রয়েছে। পশু অধিকার কর্মী থেকে শুরু করে নিউরো-সায়েন্টিস্ট এবং মেডিকেল অ্যাডভোকেটরা সবাই এটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। শুধু তাই নয়, ট্রায়াল চলাকালীন যদি কোনো ব্যক্তির ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে ইলন মাস্ক ও তাঁর কোম্পানিকে এর খেসারতও দিতে হতে পারে।