বাংলাহান্ট ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড ১৯ প্রায় সমস্ত দেশেই ত্রাস সৃষ্টি করেছে। ধনী থেকে গরিব কাউকেই ছেড়ে কথা বলেনি এই মারণ অসুখ। প্রায় দু’লাখ মানুষ মারা গেছেন বিশ্বজুড়ে। খেলোয়াড়, অভিনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অন্যান্য তারকা– অনেকেই এই রোগের কবলে পড়েছেন। বাদ যাননি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজেও। এই মাসের প্রথম সপ্তাহেই করোনা টেস্টে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ৫৫ বছরের বরিস জনসনের (Boris Johnson)।
কিছুদিন আগে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে রাখতে হয়েছিল আইসিইউ-তেও। দিন কয়েক আগেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। এর পরেই সামনে এল জেনি ম্যাকগ্লির কথা, নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা যে নার্স আইসিইউ-তে বরিস জনসনের দেখভাল করেছেন। বরিস নিজে তাঁর নিষ্ঠায় ও দক্ষতায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে জেনি অকপটে জানালেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে আর পাঁচ জন রোগীর মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তাঁকে নিয়ে কখনওই আলাদা কিছু ভাবেননি জেনি।
কয়েক দিন বাড়িতে থাকলেও, অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে ভর্তি করা হয় দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে। ১২ এপ্রিল তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এর পরেই তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশংসা করেন আলাদা করে। সেইসঙ্গে বিশেষ ভাবে নাম উল্লেখ করেন জেনি ম্যাকগ্লি নামের এক নার্সের, যিনি আইসিইউ-তে সর্বক্ষণ তাঁর খেয়াল রাখতেন। তিন রাত জেগেছিলেন তিনি একটানা।
তাই বরিস জনসনের তাঁকে নিয়ে বিশেষ ভাবে প্রশংসা করার খবর যখন তাঁর কানে আসে, তিনি বিশ্বাস করেননি। বন্ধুদের কাছে শুনে ভেবেছিলেন তাঁরা মজা করছেন। পরে সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি দেখে বিশ্বাস করেন। এর পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি জানান, এই রোগটি সকলের জন্যই ভয়াবহ। তাই কোনও রোগীর ক্ষেত্রেই এই রোগকে হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না। রোগী যিনিই হন, প্রত্যেকের প্রতিই সচেতন হতে হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের।
নিউজিল্যান্ডের নাগরিক জেনি ম্যাকগ্লি ১০ বছর ধরে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের এই হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার বিভাগে একজন নার্স হিসেবে কর্মরত। তিনি জানান, চোখের সামনে তিনি অনেক মানুষকে তাঁদের প্রিয়জনকে ছেড়ে চলে যেতে দেখেছেন, সেটাই তাঁর কাজের সব থেকে যন্ত্রণাদায়ক বিষয়। তিনি মনে করেন, এক জন নার্সের দায়িত্ব হল সেই সময়ে নিজের মাথা ঠান্ডা রেখে, কর্তব্যে অবিচল থেকে, সেই প্রিয়জনদের হাত ধরে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। করোনার এই আতঙ্কেও তাঁদের এই বিশেষ ভূমিকার খুব প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বার্তার পরে জেনি এখন সকলের ভালবাসার পাত্রী। তাঁকে নিয়ে আলোচনা করছেন সকলে। তাঁর কথা ছড়িয়ে যাওয়ার পরে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এই নার্সের। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দেশও জেনি ম্যাকগ্লির জন্য গর্বিত। দেশের প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তায় জেনি নিজেও আপ্লুত। জেনির বাবা-মাও এই ঘটনার কথা জানতে পেরে এক জন নার্সের পরিবার হিসেবে গর্বিত বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন।