বাংলাহান্ট ডেস্ক : শুক্রবার পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই অশান্ত তৃণমূলের অন্দর। তৃণমূল থেকে তাবড় সমস্ত স্তরের নেতারাই বিক্ষোভ অবরোধ করেছেন প্রার্থী তালিকার ভিত্তিতে। চলেছে ফেসবুক লাইভে এসে কেঁদে ভাসানো থেকে শুরু করে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে দল ছাড়ার মতন ঘটনাও। তবে এবার আবারও কর্মীদের রোষের মুখে রাজ্যের ঘাসফুল শিবির। তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় এবার বদলে গেল নির্দল প্রার্থীর পার্টি অফিসে। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে।
শুক্রবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই উত্তপ্ত ছিল এলাকার পরিস্থিতি। শনিবার সকাল থেকেই কাঁথি এলাকার জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন দলীয় কর্মীরা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রাক্তন কাউন্সিলর সীতারাম মাঝি শুভেন্দুর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই এলাকার দায়িত্ব নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সংগঠন গড়ে তোলেন আরেক প্রাক্তন কাউন্সিলর অমলেশ পাত্র। বিজেপির সমস্ত ধমকানি চমকানি বুক পেতে সয়েও দলের জন্য কাজ করে গেছেন তিনি।
এবার পুরভোটে টিকিট পাননি সেই অমলেশ পাত্রও। যার পরই নির্দল থেকে তাঁর প্রার্থী হওয়ার দাবি উঠতে থাকে স্থানীয় সমর্থকদের মধ্যে। এর জেরে তৃণমূল দলীয় কার্যালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাট আউট। সরানো হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও। ওই পার্টি অফিসটিকেই নিজের দলীয় কার্যালয় বানিয়ে নেন আপাতত নির্দল প্রার্থী অমলেশ পাত্র। পুরো ব্যাপারটির বিষয়ে অমলেশ পাত্র জানান, ‘দলবাজি এবং গ্রুপবাজির কারণে আমাকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেনি। টাকার বিনিময়ে টিকিট কেনা বেচা হয়েছে। তাই কর্মীদের দাবি মেনে নির্দল প্রার্থী হচ্ছি আমি। কর্মীরা পাশে রয়েছে। আমি কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে চাই’।
এরই মধ্যে কালনায় সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে গিয়ে দলের কর্মীদের সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘দলের কারও অসন্তোষ থাকলে তিনি সেটা দলকে জানাতেই পারেন। দলে সেই দরজা খোলা রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় শুনছি আবারও প্রার্থী তালিকায় বদল করা হয়েছে। সেটা দল নিশ্চয়ই বিবেচনা করেই পরিবর্তন করেছে।’ তাঁর মতে কর্মীদের এই অসন্তোষ আদপে বিরোধীদের সুবিধা করে দেওয়া। ‘দুনৌকায়’ পা দিয়ে চলা নেতারা টিকিট পেলে কর্মীদের রাগ হওয়া স্বাভাবিক বলেও অবশ্য দাবি দেবাংশুর।
প্রসঙ্গত, পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই দল ছেড়েছেন একাধিক স্থানীয় নেতা। গতকালই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ছেলেকে নিয়ে তৃণমূল ত্যাগ করেন পুরুলিয়ার দাপুটে নেতা শামিম দাদ খান। তৃণমূলকে ‘পিকেমূল’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘দল আর তৃণমূল নেই। পিকেমূল হয়ে গেছে। সব কিছু প্রশান্ত কিশোরের কথা মত হচ্ছে।’ এভাবে পুরভোটের আগে একাধিক নেতা নেত্রীর দলত্যাগে এ কার্যতই দুর্বল হয়ে পড়ছে তৃণমূলের সংগঠন, তা বলাই বাহুল্য।