বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বঙ্গে কান পাতলে যে একটি কথা এখন সর্বত্র শোনা যাচ্ছে তা হল ‘নিয়োগ দুর্নীতি’ (Recruitment Scam)। সেই গতবছর রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) দিয়ে খুললো খাতা, তারপর থেকে ক্রমশ্যই লম্বা হয়ে চলেছে অভিযুক্তদের তালিকা। যার নবতম সংযোজন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এই সুজয়কৃষ্ণ, কুন্তল, শান্তনু এদের কয়েক জনকে বাদ দিলে বলতে হয় পার্থ জামানার প্রায় গোটা শিক্ষা দফতরই এখন শ্রীঘরে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত বছর জুলাই মাসে ইডির হাতে গ্রেফতার হন তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তারপর একে একে তার সময়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে যারা উচ্চ পদে ছিলেন—সেই পর্ষদ মানিক ভট্টাচার্য, এসএসস্যার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহাদেরও এখন দিন কাটছে জেলের ঘানি টেনেই।
সেই নিয়ে চর্চার মধ্যেই এবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এর নজরে রাজ্যের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) দফতর। আজই ৫ খানেক টিম নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে দুর্নীতির রহস্যভেদ করতে নেমে পড়ল সিবিআই (CBI)। আর এর নেপথ্যে যেই একটা নাম না বললেই নয় তা হল নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীল।
রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে হঠাৎই বেরিয়ে আসে কেউটে। প্রোমোটার অয়ন শীলের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে সামনে আসে পুরসভায় দুর্নীতির (Municipality Recruitment Scam) একাধিক নথি। যার পরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুরু হয় তদন্ত। তবে বিচারপতির এই রায়ে নারাজ রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চ, অবকাশকালীন বেঞ্চ থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ছোটে।
শুধুমাত্র একটাই দাবি রাজ্যের, এই মামলায় যেন সিবিআই তদন্তের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও ক্রমেই নির্দেশের বদল হয়নি। এরপর গত মঙ্গলবার ওই একই আর্জি নিয়েই ফের কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। প্রধান বিচারপতি সেই মামলা বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে পাঠিয়েছে।
আর এরই মধ্যেই বুধবার একজোটে রাজ্যের ১৪টি জায়গায় হানা দিয়েছে সিবিআই এর দল। এদিন সল্টলেকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, চুঁচুড়া, শান্তিপুর, ব্যারাকপুর, পানিহাটি, দক্ষিণ দমদম, তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের এলাকা কামারহাটি পুরসভা সহ রাজ্যের একাধিক পুরসভায় চলছে সিবিআই তল্লাশি। পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের (Ayan Shil) বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি চালাচ্ছে বলে খবর মিলছে।
বুধবার দিনভর যখন চলছে সিবিআই অভিযান তখন মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘সিবিআই ত্রাস তৈরি করার চেষ্টা করছে।’ তার কথায়, ‘যদি কোনও অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে যারা দোষী তারা শাস্তি পাবে।” বিরোধী দল বিজেপির অবশ্য স্পষ্ট কথা, ‘সব যদি ঠিক হয়, তাহলে এত চিন্তা কীসের।’ একদমই তাই। এবার পরবর্তীতে এই তদন্ত কোন নতুন মোড় নেবে? সেই নিয়ে জোর চৰ্চা সর্বত্র। তবে না আপনি না আমি, এই প্রশ্নের উত্তর দেবে শুধুমাত্র সময়।