বাংলা হান্ট ডেস্ক: এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল মধ্যপ্রদেশের সাগর। জানা গিয়েছে যে, সেখানকার নিকটস্থ মাঝগুওয়ান গ্রামে, এক যুবক তার খুড়তুতো বোনের চিতায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মূলত, একটি কুয়োয় পড়ে প্রাণ হারায় ওই যুবকের বোন। এই খবর পেয়েই ৪৩০ কিলোমিটার দূর থেকে বাইক চালিয়ে সেখানে পৌঁছে যায় ওই যুবক। এমনকি, শ্মশানে গিয়েই সে সটান জ্বলন্ত চিতাকে প্রণাম করে তার উপর শুয়ে পড়ে। এমতাবস্থায়, গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তার। এদিকে, এই ঘটনার ৩৬ ঘন্টা পর, রবিবার সকালে তার বোনের চিতার কাছেই তাকে দাহ করা হয়।
ঠিক কি ঘটেছিল?
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ জ্যোতি ওরফে প্রীতি (২১) বাড়ির কাছে ক্ষেতের দিকে যাওয়ার পর বেশ কয়েকঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ফিরে আসেনি। এই প্রসঙ্গে জ্যোতির দাদা শের সিং ঠাকুর জানান, “ওই ক্ষেতে সবজি লাগানো ছিল। জ্যোতি প্রায়ই সন্ধ্যেবেলা সবজি আনতে যেত, কিন্তু সেদিন দেরি হওয়ায় আমরা ভেবেছিলাম সে নিশ্চয়ই কোনো বন্ধুর বাড়িতে গেছে। এরপর রাত ১২ টা পর্যন্ত গ্রামে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।”
এমতাবস্থায়, শুক্রবার সকাল ৯ টায় ওই ক্ষেতে যান জ্যোতির বাবা ভোলে সিং। পাশাপাশি, সবার সন্দেহ হতে থাকে যে জ্যোতি হয়ত কুয়োয় পড়ে যেতে পারে। তারপরেই মোটর বসিয়ে কুয়োর জল বের করলে সেখানে জ্যোতির জামা-কাপড় দেখা যায়। এরপর পুলিশ সেখান থেকে জ্যোতির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। এদিকে, জ্যোতির খুড়তুতো ভাই করণ ঠাকুর (১৮)-এর কাছে এই খবর যাওয়া মাত্রই সে বাইকে করে সাগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্যোতিকে দাহ করা হয়:
এই প্রসঙ্গে বাহেরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিব্য প্রকাশ ত্রিপাঠি জানান, ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্যোতির মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর গ্রামের পাশের শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে পরিবার। পাশাপাশি, জ্যোতির দাদা শের সিং জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় শেষকৃত্যের পর গ্রামের সবাই বাড়িতে ফিরে যান। তখনও পর্যন্ত করণ সেখানে পৌঁছয়নি। শনিবার সকাল ১১ টার দিকে গ্রামের কয়েকজন লোক জানান, জ্যোতির চিতার কাছে তার ভাইকে আগুনে ঝলসে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে করণের মৃত্যু হয়:
এমতাবস্থায়, ধর জেলার ধরমপুরী তহসিলের খালঘাট গ্রামের বাসিন্দা করণের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কথা তার বাবা উদয় সিংকে জানানো হয়েছিল। তিনি জানান, করণ তার বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাইকে করে সাগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এই প্রসঙ্গে শের সিং জানান, করণ হয়ত শনিবার সকাল ৭ টা থেকে ৯ টার মধ্যে শ্মশানে পৌঁছেছিল এবং তার বোনের জ্বলন্ত চিতাতেই শুয়ে পড়েছিল। বেলা ১১ টার দিকে গ্রামবাসীরা তাকে ঝলসে যেতে দেখেন। এরপর তারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও পথেই মারা যায় করণ।
বাবা-মা আসার পর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়:
শনিবার বিকেলে করণের মৃত্যুর পর তার মরদেহও ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলেও তখনও পর্যন্ত করণের বাবা-মা সেখানে পৌঁছতে পারেননি। রাতে মাঝগুয়ান গ্রামে পৌঁছন তাঁরা। এরপর রবিবার সকালে সবার উপস্থিতিতে বোন জ্যোতির চিতার কাছেই করণের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে পরিবার।
দু’জনের মৃত্যুর তদন্ত চলছে:
এই প্রসঙ্গে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্যোতি ওরফে প্রীতি (২১) কুয়ো থেকে জল ভরছিলেন। এমতাবস্থায়, পা পিছলে গিয়ে তিনি সেখানে পড়ে মারা যান। এরপরে তার ভাই করণ গ্রামে পৌঁছে বোনের জ্বলন্ত চিতায় শুয়ে পড়েন। এতে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। এদিকে, গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। দু’টি ঘটনারই তদন্ত করছে পুলিশ।