বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমরা সকলেই জানি প্রত্যেক সফলতার হাসির পেছনেই থাকে এক অদম্য লড়াইর কাহিনি। আর সেই লড়াই পেরিয়েই সফলতার শিখর ছুঁতে পারেন অনেকেই। তাতে উদ্বুদ্ধ হন বাকিরাও। প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী, বিয়ের পর মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে যেতে হয় এবং নতুন পরিবারে গিয়ে নিজেদের মানিয়েও নিতে হয় তাঁদের।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, নতুন সংসারে এসে নিজেদের দেখা স্বপ্নই পরিস্থিতির চাপে ভুলতে বসেন মহিলারা। এমনকি, তাঁদের সেই স্বপ্ন বহুক্ষেত্রেই থেকে যায় অধরাও। কিন্তু, তারই মাঝে অনেকেই থাকেন যারা বহু প্রতিবন্ধকতা সত্বেও নিজেদের লক্ষ্যে স্থির থেকে তৈরি করেন এক অনন্য কাহিনি। ঠিক যেমন নিজের স্ত্রীকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়ে সকলের কাছে আইকন হয়ে উঠেছেন জয়দীপ পিসাল। বর্তমান প্রতিবেদনে সেই প্রসঙ্গই বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপিত করা হল।
মহারাষ্ট্রের সাতারা শহরের জয়দীপ পিসাল শৈশব থেকেই কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তিনি স্টেশনে আখের রসও বিক্রি করতেন। পাশাপাশি, এমপিএসসির প্রস্তুতির জন্য তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করে একবার নয়, বরং দু’বার এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি একবার পিএসআই (পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর) এবং আরেকবার অন্য পদ পেয়েছিলেন। কিন্তু এতেও তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না।
তিনি প্রথম থেকেই গ্রামের মানুষদের সেবা করতে চেয়েছিলেন। যে কারণে চাকরিতে যোগ দেননি জয়দীপ। এমপিএসসি পাশ করার পর, তিনি হিরো হন্ডার ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে গ্রামে গেলে প্রত্যাখ্যাত হন। যদিও, পরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে পলাশী গ্রামের সরপঞ্চ হিসেবে মনোনীত হন। এদিকে, এই পদে আসীন হয়েই তিনি গ্রামে একাধিক উন্নতির কাজ শুরু করেন।
যদিও, চাকরির ক্ষেত্রে এত বড় পদ প্রত্যাখ্যান করার পর গ্রামের মানুষ তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করতে থাকেন। গ্রামের যুবকরাও কার্যত উপহাসের পাত্র বানিয়ে দেন জয়দীপকে। কিন্তু জয়দীপ সেদিকে কর্ণপাত না করেই জীবনের লড়াই চালিয়ে যান। এমবতাবস্থায়, তিনি কল্যাণী নামের এক মহিলার প্রেমে পড়ে যান। যদিও, ওই মহিলার বাড়ির সদস্যরা জয়দীপকে চাকরি প্রত্যাখানের জন্য মেয়ে দিতেও রাজি ছিলেন না।
এদিকে, জয়দীপ রীতিমত চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে কল্যাণীর বাবাকে জানিয়ে দেন যে, তিনি তাঁর মেয়েকে ২ বছরের মধ্যে PSI (পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর) বানিয়ে দেখাবেন। এরপরেই কল্যাণীকে বিয়ে করে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকেন জয়দীপ। এমনকি, সমস্ত আচার অনুষ্ঠানের পর সত্যনারায়ণ পুজো সম্পন্ন করে বই এবং পড়ার জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ করেন তিনি। এমনকি, হানিমুনেও যাননি তাঁরা।
জয়দীপ কল্যাণীকে পড়াশোনার ক্ষেত্রের অত্যন্ত সাহায্য করেন। ফাঁকি না দিয়ে এবং সময় নষ্ট না করে রীতিমত গভীর অনুশাসনে পরিশ্রম করতে থাকেন কল্যাণীও। ২০১২ সালে এমপিএসসি পাস করেন কল্যাণী। পাশাপাশি, তারপরেই শুরু হয় তাঁর প্রশিক্ষণ। এমন সময় জয়দীপের শ্বশুরমশাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলে জয়দীপ জানান যে, “হিরো-হোন্ডার ব্যবসায় রমরমা চলছে। গ্রামে সরপঞ্চ হয়ে এলাকায় আমার আধিপত্যও রয়েছে। মানুষের শুভেচ্ছা পাচ্ছি, স্বপ্ন আর কী?”
পাশাপাশি জয়দীপ আরও জানান “আমি সব পেয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষ করার পরই আমি আমার স্ত্রীকে ইউনিফর্ম পরে একবার স্যালুট করতে চাই”। কল্যাণী বর্তমানে মুম্বাই পুলিশে পিএসআই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এদিকে, এই সাফল্যের কাহিনি দেশের প্রতিটি পুরুষ এবং মহিলার কাছে যে অনুপ্রেরণা জোগাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।