বাংলাহান্ট ডেস্ক: মুম্বইয়ের কামাথিপুরার একজন বারবনিতা, ভারতবর্ষে পতিতা নারীদের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের নেত্রী, যিনি পতিতালয় বাঁচাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরুর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। হ্যাঁ, এমনই তেজোদ্দীপ্ত ব্যক্তিত্ব ছিল গাঙ্গুবাঈয়ের। গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াবাদি, যাঁর জীবন নিয়ে আসতে চলেছে সিনেমা। চরিত্রে অভিনয় করবেন আলিয়া ভাট। সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে সেই ছবির পোস্টার। কথায় বলে ভাগ্যের ফের! যিনি নিজেই অভিনয় জগতে আসতে চেয়েছিলেন তাঁর জীবন নিয়েই এখন সিনেমা তৈরি হচ্ছে।
মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র জগতের অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন গাঙ্গুবাঈ। তখন অবশ্য তাঁর নাম ছিল গঙ্গা হরজীবনদাস কাঠিয়াবাদি। গুজরাটের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন তিনি। সেই চল্লিশের দশকেও সমাজের কাছে একটা নিদর্শন হয়েছিল তাঁর পরিবার। সেই সময়েও তাঁর বাড়ির মেয়েরা সিনেমা দেখত। হিন্দি সিনেমা দেখেই শুরু গঙ্গার স্বপ্নের জাল বোনা। তিনি তখন কিশোরী। পড়াশোনায় মন নেই, কোনও কাজে আগ্রহ নেই। চোখে শুধু অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন ও না দেখা মুম্বই শহরের ছবি। এমন সময় তাঁদের ফার্মে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসাবে যোগ দিলেন রামলাল নায়েক নামে বছর ২৭-এর এক যুবক। গঙ্গা জানতে পারলেন তিনি নাকি বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন মুম্বইতে। শুরু হল তাঁর কাছে সেই শহরের গল্প শোনা। বিষয়টা প্রেমে গড়াতে খুব বেশি সময় নেয়নি।
https://www.instagram.com/p/B7U1CVqlAmr/?utm_source=ig_web_copy_link
https://www.instagram.com/p/B7U0140lyBR/?utm_source=ig_web_copy_link
দুজনে বিয়ে করে মুম্বই চলে আসেন। কিন্তু কিশোরী গঙ্গা তখনও রামলালর আসল উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারেননি। মুম্বই এসে ৫০০ টাকার বিনিময়ে কামাথিপুরা পতিতালয়ের সর্দারনী শীলা মাসির কাছে গঙ্গাকে বিক্রি করে দেন রামলাল। মাসি পরে গঙ্গাকে সবটা খুলে বলেন। এরপরেও কয়েকবার পালাতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সফল হননি। শেষপর্যন্ত অদৃষ্টকে মেনে নিতে বাধ্য হন গঙ্গা। নাম পরিবর্তন করে হন গাঙ্গুবাঈ। সেই থেকেই শুরু তাঁর জীবনের পরিবর্তন। শিক্ষিত, ব্যক্তিত্বপূর্ণ গাঙ্গুর পতিতালয়ের সর্বেসর্বা হয়ে উঠতে বেশ সময় লাগেনি।
এর মধ্যে পতিতালয়কে ঘিরে পাঠান মাফিয়াদের আস্তানা গড়ে ওঠে। মাফিয়াদের সর্দারকে রাখি পরিয়ে ভাই পাতিয়ে নেন গাঙ্গু। উত্তরোত্তর বেড়ে চলে তাঁর ক্ষমতা। সেইসঙ্গে বাড়াতে থাকেন পতিতালের মধ্যেকার নিয়ম। কোনও মেয়েকেই আর জোর করে নিয়ে আসা যেত না সেখানে। কেউ বিক্রি করে দিয়ে গেলেও যদি মেয়েটি থাকতে না চাইত তাহলে তাঁকে নিজ দায়িত্বে বাড়ি পৌঁছে দিতেন গাঙ্গুবাঈ। ইতিমধ্যে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্রিটিশ মদতে তৈরি পতিতালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়ার দাবি ওঠে। গাঙ্গুবাঈ হয়ে ওঠেন কামাথিপুরার প্রেসিডেন্ট। তাঁর নেতৃত্বে পথে নামে হাজার হাজার বারবনিতা। সংবাদপত্রের শিরোনামেও সেই সময় জায়গা করে নিয়েছিল তাঁর বক্তৃতা। পতিতালয় বাঁচাতে সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নেহরুর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন গাঙ্গুবাঈ। এরপর সত্তরের দশকে কামাথিপুরাতেই মারা যান গাঙ্গুবাঈ। এখন সেই আগের রমরমাও আর নেই কামাথিপুরায়। গাঙ্গুবাঈয়ের ইতিহাসও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে।