বাংলা হান্ট ডেস্কঃ জীবন এবং মৃত্যু, এই দুইয়ের মাঝে যে ক্ষীণ রেখা রয়েছে তা যেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Indian Army) ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার (Vikram Batra) জন্য কার্যকর নয়। তিনি আজ ইহজগতে নেই, কিন্তু তিনি বেঁচে রয়েছেন কোটি কোটি ভারতীয়র হৃদয়ে। দেশমাতৃকার জন্য দিয়েছেন সর্বোচ্চ বলিদান, জীবিত না থেকেও অমর হয়ে রয়েছেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা (Captain Vikram Batra)। ১৯৯৯ সালে আজকের দিনে অর্থাৎ ৭ জুলাই বীরত্বের মৃত্যু গ্রহণ করেই অমরত্ব লাভ করেন তিনি। তাঁর বীরগাঁথা নিয়েই আজ আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন।
গল্পের শুরুটা হয় ১৯৯৬ সালে। আর পাঁচজন সাধারণ পরীক্ষার্থীর মতোই SSB অর্থাৎ সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের পরীক্ষা উৎরে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম গায়ে চাপিয়েছিলেন তরুণ বীর বিক্রম বাত্রা। ভারতীয় সেনা তখনও আঁচ পায়নি কোন আগুন পাখিকে তারা পেয়েছে। নাছোড়বান্দা স্বভাবের ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা ছোট থেকেই মেধাবী। তবে সফলতার জন্য তথাকথিত ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি নয়, জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ভারতীয় আর্মিকে।
২২ বছর বয়সেই বীরগতি হয় তাঁর। কিন্তু এই বছর বাইশের জওয়ান এমন কর্ম করে গিয়েছেন যার জন্য দেশের অগুণতি মানুষের কাছে আজ তিনি প্রনম্য। সালটা ১৯৯৯, শীতের সময় সুযোগ বুঝে পড়শীদেশ পাকিস্তান কার্গিল ছিনিয়ে নেওয়ার অনুসন্ধিৎসা তৈরি করে। সন্ত্রাসবাদী এবং সেনার একটি দল পাঠায় ভারতে। ভারতীয় সেনার কাছে সেই খবর আসে বহু পরে। অবশেষে শুরু হয় যুদ্ধ। এসময়ই লেফটেন্যান্ট বিক্রম বাত্রাকে দ্রাসে পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিক্রম বাত্রাকে নির্দেশ দেওয়া হয় দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নকে সাথে নিয়ে তৈরি থাকতে। যদিও তাদের (2 RJ RIF) কে সেসময় রিজার্ভে রাখা হয়। সেসময় 18 গ্রেনেডিয়ার কার্যোদ্ধারে ব্যর্থ হলে দায়িত্ব আসে রাজপুতানা রাইফেলসের ওপর। দায়িত্ব পাওয়ার পর তোলোলিং পর্বতমালা এবং হাম্পের কিছু অংশ জয় করে বিক্রম বাত্রার রাজপুতানা রাইফেলস। এই সাফল্যের পরই তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার যোগেশ কুমার জোশী পরিকল্পনা করেন পয়েন্ট 5140 জয় করার। দুটি দলের মধ্যে একটির দায়িত্ব পড়ে বিক্রম বাত্রার ওপর।
বিজয়ের নির্দেশ হিসেবে বিক্রম বাত্রা বেছে নেন তার বিখ্যাত লাইন ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর’। অসীম সাহস এবং অসাধারণ শৌর্য বীর্যের সাথে পিক 5140 জয় করেন লেফটেন্যান্ট বিক্রম বাত্রা। সামান্য আহত হলেও পয়েন্ট 4700-ও জয় করেন তিনি। এরপর আরো এক পয়েন্ট 5140 জয়ের পর তাঁর পদোন্নতি হয় এবং ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। এরপরের লক্ষ্য ছিল পয়েন্ট 4875। কারণ এই পিকে বসেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সরাসরি ন্যাশনাল হাইওয়ে-১ এর ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল।
জানা যায় এইসময় ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা তাঁর 13 JAK RIF এর সাথে পিক 4875 তেজকে মাত্র ১৫০০ মিটার দূরে ছিলেন। সাপোর্ট বেস থেকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছিলেন ক্যাপ্টেন। এদিকে পাকিস্তানি সেনা থুড়ি সন্ত্রাসবাদীরা ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রাকে এতটাই ভয় পেয়েছিল যে তারা তাকে ভয় দেখানোর জন্য জন্য ভিরসেল সিস্টেম অবধি হ্যাক করে। অন্যদিকে ক্যাপ্টেন বাত্রা তখন পিকের দিকে আরোহণ করছেন। ক্যাপ্টেন বাত্রা এবং তাঁর দল এবার আক্রমণ করে পয়েন্ট 4875 এর ওপর।
শত্রুদলের কাছে হেভী মেশিনগান থাকলেও অসমসাহসী বাত্রা দমে যাননি। তিনি গ্রেনেড দিয়ে শত্রুদের নির্মূল করেন। একদম সামনা সামনি যুদ্ধে ৫ পাকিস্তানিকে বধ করেন এরপর তার প্রহারের শিকার হয় আরো ৪ শত্রুসেনা। এরমধ্যে তাঁর দলের দুইজন আহত হয়ে পড়লে তাদের বাঁচাতেও নিজেই এগিয়ে যান ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা। সেসমই দূর থেকে পাকিস্তানি স্নাইপারের গুলি তাঁর বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। কিন্তু তাঁর সেই বলিদান বিফলে যায়নি, ভারতীয় সেনা দখল নেয় পয়েন্ট 4875 এর। আর নিজের অসমসাহস এবং বীরত্বের জন্য তাঁকে পরম বীর চক্রে ভূষিত করে ভারতীয় সেনা। এবং পয়েন্ট 4875 এর নামও তাঁর নামেই রাখা হয় ‘বাত্রা টপ’।
উল্লেখ্য, এই যুদ্ধে যাওয়ার আগে বিক্রম বাত্রা তাঁর বন্ধুদের বলে গিয়েছিলেন যে, ‘“হয় তেরঙ্গা উড়িয়ে আসব, নাহলে তাতে মুড়ে আসব।” আজও ক্যাপ্টেনের এই কথা শুনলে কোটি কোটি ভারতবাসীর রক্ত গরম হয়ে ওঠে। বলে দিই, ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার জীবনী নিয়ে বলিউডে ‘শেরশাহ’ নামে একটি সিনেমাও হয়েছে।