বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সোমবার সকাল থেকেই আর জি কর মামলার (RG Kar Case) শুনানির দিকেই নজর ছিল সবার। আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যা কাণ্ডের মামলায় দোষী সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা করেছেন বিচারক অনির্বাণ দাস (Anirban Das)। কলকাতার নিম্ন আদালত অর্থাৎ শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা আদালতের বিচারক তিনি। দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে একাধিক মামলার রায় দিয়েছেন জাস্টিস দাস।
আরজি কর কাণ্ডে (RG Kar Case) সঞ্জয়কে শাস্তি দিয়েছেন জাস্টিস অনির্বাণ দাস
কখনও কোনো অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন, আবার কাউকে বেকসুর খালাস করেছেন। কিন্তু গত বছরের আগস্ট মাসে কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া আরজি করের (RG Kar Case) নির্মম ধর্ষণ-হত্যা কাণ্ড শুরু থেকেই অত্যন্ত হাইপ্রোফাইল কেস হয়ে উঠেছিল। তাই আজ এই মামলায় তিনি কি রায় দেবেন সেদিকেই তাকিয়ে ছিল সারা দেশ। শুরু থেকেই সবাই অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির শাস্তি দাবি করেছিলেন। কিন্তু আজ বিকেলে রায় ঘোষণার সময় বিচারক অনির্বাণ দাসের এই ঘটনাকে, ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ মনে হয়নি।
তিনি অভিযুক্তকে ফাঁসি নয় আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর এই রায় ঘোষণার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। আশাহত হয়েছেন নির্যাতিতার পরিবার-ও। শনিবারেই জাস্টিস দাস সঞ্জয়কে এই মামলায় (RG Kar Case) দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। আজ বিকেল রায় ঘোষণা করার সময় বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়েছেন, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩(১) তিনটি ধারাতেই সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। তাকে আমৃত্যু জেলেই থাকতে হবে।
এই আবহে বিচারক দাসের পরিচয় জানার জন্য ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যেই। জানা যাচ্ছে, দু’বছর হল জাস্টিস অনির্বাণ দাস, শিয়ালদা কোর্টে অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক হিসেবে এসেছেন। আইনজীবী মহলের খবর ইতিমধ্যেই একাধিক পকসো মামলায় তিনি দোষীদের শাস্তি দিয়েছেন। তবে এতদিন পর্যন্ত আরজিকর মামলার মত কোন গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি, শিয়ালদহ কোর্টে হয়নি। ইতিপূর্বে মাদক আইনের একটি মামলায় এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘ওই টাকা চাই না’! সঞ্জয়ের ফাঁসি না হওয়ায় CBI তদন্ত নিয়ে কী বললেন নির্যাতিতার বাবা-মা?
সূত্রের খবর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে স্নাতক পাশ করার পর মুর্শিদাবাদেই আইনজীবী হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন জাস্টিস দাস। ১৯৯৯ সাল থেকে বিচারক হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। কৃষ্ণনগরের দেওয়ানি বিচারক হিসেবে তাঁর প্রথম পোস্টিং হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিধাননগরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পদেও ছিলেন।
এরপর ২০১১ সালে পদোন্নতি হতেই অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক হন বিচারক অনির্বাণ দাস। ২ বছর পর অর্থাৎ ২০১৩ সালে জেলা বিচারক ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত হন জাস্টিস দাস। এরপর পুরুলিয়া জেলা থেকে বদলি হয়ে চলে আসেন শিয়ালদহে। দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে বিচার বিভাগের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও সামলেছেন বিচারক দাস। দীর্ঘ ২৫ বছরের কর্মজীবনে ‘লিগ্যাল রিমামব্রান্সার’-এর দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন তিনি। দায়িত্ব সামলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম রেজিস্টার হিসেবেও। এছাড়াও এক সময় কলকাতা হাইকোর্টের ‘মিডিয়েশন কমিটি’-র সচিব পদের দায়িত্বও সামলেছিলেন তিনি।