বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আরজি কর (RG Kar) কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতার শিয়ালদহ আদালত। এই মামলায় রায়দানের সময় বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়েছিলেন এই ঘটনাকে তাঁর বিরলের মধ্যে বিরলতম মনে হয়নি। এই কারণেই দোষী সঞ্জয় রায়কে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়নি। পরে শিয়ালদহ আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির শাস্তি দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। মামলার আবেদনের সময় আরজি করের ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে উল্লেখ করে কলকাতা হাইকোর্টে ছয়টি কারণ দেখিয়েছে সিবিআই।
আরজি কর (RG Kar) কাণ্ডে সঞ্জয়ের ফাঁসির ৬ কারণ দেখাল CBI
শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসের সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ বলেও উল্লেখ করেছেন তাঁরা। আগামীকাল সোমবার এই মামলার (RG Kar) শুনানি রয়েছে উচ্চ আদালতে। শিয়ালদহ আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সঞ্জয়ের ফাঁসির আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছে রাজ্য সরকারও। আগামীকাল বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা শুনবে হাই কোর্টে ।
শুরু থেকেই আরজি কর(RG Kar)-কাণ্ডে দোষী সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে সিবিআই। হাই কোর্টের আবেদনে তারা জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্তে নেমে ২২৫টি তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। নিজেদের আবেদনের সপক্ষে মোট ছ’টি কারণ দেখিয়েছে সিবিআই।সেগুলি হল—
১) আরজি কর (RG Kar) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে নির্মম ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা সমাজে ভীতি তৈরী করে। এরফলে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই ধরনের ঘটনা সমাজে যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে, তা জনমানসে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
২) ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সঞ্জয়ের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। বিচারক নিজে এই ঘটনাকে ‘জঘন্য’ এবং ‘নৃশংস’ বলে উল্লেখ করেছেন। সিবিআই তদন্তেও তা প্রমাণিত হয়েছে। তাই এরপরেও এই ঘটনাকে ‘বিরলতম ঘটনা’ না বললে আইনের ভুল ব্যাখ্যা হয়ে দাঁড়ায়।
৩) আরজি কর-কাণ্ডের সময় সঞ্জয় মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। খুন কিংবা ধর্ষণের জন্য কেউ তাঁকে উস্কানি দেয়নি। তাই সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বেচ্ছায় সে এই কাজ করেছে। সঞ্জয়কে মৃত্যুদণ্ড না-দিয়ে ভুল করেছেন বিচারক।
৪) চিকিৎসককে হাসপাতালের ভিতর ধর্ষণ করে খুন করেছেন সঞ্জয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে বিপুল আন্দোলন হয়েছিল। এই আন্দোলন চলাকালীন লক্ষাধিক মানুষ প্রতি দিন ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: RG Kar-র নির্যাতিতার বাবার ‘দয়ায় মমতা মুখ্যমন্ত্রী হননি! বিস্ফোরক ফিরহাদ
৫) সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় কলকাতা পুলিশের সদস্য ছিলেন। রোগীর পরিজন এবং পুলিশের মধ্যে সমন্বয় রক্ষাই ছিল তার কাজ। অর্থাৎ, চিকিৎসকের সুরক্ষার দায়িত্ব ছিল তার। অথচ তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করেছে সঞ্জয়।
৬) সঞ্জয় এতটাই সাংঘাতিক ছিল যে তিলোত্তমাকে ধর্ষণের পরেও তাকে রেহাই দেয়নি। তাই তারপর তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন। এই কারণেই সঞ্জয়কে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া যায় না।
আরজিকর মামলার শুনানি চলাকালীন গত ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩(১) তিনটি ধারাতেই দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন কলকাতার শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। যদিও সাজা পাওয়ার দিনেও আদালতে সঞ্জয় দাবি করেছিল, সে নাকি নির্দোষ।