অল্প বয়সে হারিয়েছিলেন বাবাকে! মাসে ৪০ টাকার চাকরি করেও আজ কোটি টাকার মালিক ইনি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: দীর্ঘ পরিশ্রম ছাড়া যে সফল হওয়া কখনই সম্ভব নয় তা আমরা সকলেই জানি। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রমের পথ হয়ে থাকে অত্যন্ত কণ্টকাকীর্ণ। যদিও, সেই পথের সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকেই দূরে সরিয়ে রেখে সাফল্যের অনন্য উত্তরণের কাহিনি গড়ে তুলতে সক্ষম হন কিছু মানুষ। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা সেই রকমই এক লড়াকু ব্যক্তিত্বের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব।

ছেলেটির যখন মাত্র সতেরো বছর বয়স ছিল ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বাবাকে হারায় সে। যার ফলে তীব্র আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে মা-এর সাথেই দিন গুজরান হচ্ছিল তার। এমনকি, একটা সময়ে অন্নসংস্থান এবং বাড়ি ভাড়ার খরচ সামলাতে স্কুলও ছাড়তে হয় তাকে। প্রতি মাসে মাত্র ৪০ টাকা বেতনের সাথে কর্মজীবন শুরু করেও বর্তমানে সেই ছেলেটির কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ৩২ কোটি টাকা। বিলাসবহুল বাংলো থেকে শুরু করে বিএমডব্লিউ গাড়ি সবকিছুই এখন রয়েছে তাঁর কাছে।

   

তবে, এই প্রাপ্তির পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং জেদ। এভাবেই, চেন্নাইয়ের কৃষ্ণ কুমার এখন সকলের কাছে “আইকন” হয়ে উঠেছেন। প্রথম থেকেই সংসারের খরচ সামলাতে একাধিক ছোট ছোট কাজ করতে হত তাঁকে। একটা সময়ে তিনি ৪০ টাকার মাসিক বেতনে আংশিকভাবে টাইপিস্টের চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু সেই টাকা দিয়ে তিনি বাড়ি ভাড়াও নিতে পারছিলেন না। এরপরই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। এদিকে, কলেজের ডিগ্রি না থাকাতে কৃষ্ণকে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি তাঁর মায়ের সাথে একটি হাসপাতালে হিসাবরক্ষকের কাজও করেছিলেন।

এই প্রসঙ্গে ২০১৭ সালে কৃষ্ণ কুমার একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, “আমার একটি কাজে ছুটি ছিল মঙ্গলবার এবং অন্যটিতে রবিবার। তাই আমি ছুটি না নিয়ে মাসের পর মাস কাজ করেছি।” খরচ সামলাতে তিনি একটি চামড়া রপ্তানির কোম্পানিতে ৩০০ টাকার বেতনেও কাজ শুরু করেন। এমনকি, একটি কোল্ড ড্রিংক কোম্পানিতেও চার বছর কাজ করেন কৃষ্ণ।

১৯৯০ সালে কৃষ্ণ কুমার মাত্র এক বছর চাকরি করার পরেই সেলস ম্যানেজার হিসেবে উন্নীত হন। তারপর বিয়ে ও সন্তানের পিতা হওয়ায় তাঁর দায়িত্বও বেড়ে যায়। এমতাবস্থায়, কঠোর পরিশ্রম এবং পেশাগত দক্ষতার কারণে, তিনি তাঁর সমস্ত পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজের কোম্পানি শুরু করেন।

কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁর ভাগ্য সহযোগিতা করেনি এবং হর্ষদ মেহতা কেলেঙ্কারিতে পুরো বাজার ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর ৮,০০০ টাকা সঞ্চয় করে তিনি Avon Solutions & Logistics Pvt Ltd নামে একটি লজিস্টিক কোম্পানি শুরু করেন। একটা সময়ে সমগ্র চেন্নাই জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর ব্যবসা।

আজ, এই কোম্পানিতে ১ হাজার জনেরও বেশি কর্মচারী নিযুক্ত রয়েছে এবং প্রায় ৩২ কোটি টাকার বার্ষিক টার্নওভারও রয়েছে৷ কৃষ্ণ বিশ্বাস করেন যে, অটোমেশন এবং প্রযুক্তি তাঁর ব্যবসা এবং কোম্পানির সুনাম বাড়িয়েছে। বর্তমানে তিনি একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি চালান। শুধু তাই নয়, এখন তিনি চেন্নাইতে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিকও। রীতিমত কঠিন পরিশ্রম ও সংগ্রামের ভিত্তিতে তিনি আজ নিজের সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর