বাংলা হান্ট ডেস্ক : ভারতে চলছে চূড়ান্ত ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িকতা। এই প্রসঙ্গে ফের সরব হলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (Amartya Sen)। রবিবার কলকাতায় প্রতীচী ট্রাস্টের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এদিন তিনি বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য কী, সেটা শুনতে অনেকের আপত্তি। ভারতে এরকম অবস্থা তো খুব বেশি দিন টেকেনি!’ নোবেলজয়ী মনে করেন, ‘দেখতে হবে, কেন আমরা এতটা পিছিয়ে পড়েছি। তার সবচেয়ে বড় কারণ মানুষকে ক্ষমা করার মানসিকতা অনেকটাই কমে গিয়েছে।’
গত শনিবার কলকাতায় (Kolkata) এসে পৌঁছন রেখেছেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। এদিন সকালে প্রতীচী ট্রাস্টের ‘যুক্তসাধনা’ নামের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সেখানেই তিনি জানান দেশে গত কয়েক বছরের হিংসা, হানাহানি ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি বহুল পরিমাণে। অমর্ত্য বলেন, ‘ভারতবর্ষের গণতন্ত্রের ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তাহলে সেক্ষেত্রে দুটো জিনিস দেখতে হবে। একটা বিভিন্ন দলের মধ্যে যে ঝগড়াঝাঁটি, যে বিরোধ, তার কারণ কী? কী জন্য দেশে এমন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
এদিন এক ঝাঁক স্কুলপড়ুয়ার সামনে তাঁর নিজের মেয়ের স্কুলের গল্প শোনান অমর্ত্য সেন। তাঁর বড় মেয়ে অন্তরা তখন পাঁচ বছরের। কলকাতার নামী স্কুলে কন্যাকে নিয়ে যেতেই নানা রঙের এটা-সেটা দেখিয়ে রং চেনানোর পরীক্ষা নেন শিক্ষক। মেয়ে চুপ! তার হাত ধরে সেই ঘর থেকে বেরোতেই কন্যার উক্তি, ‘আচ্ছা বাবা, ওই টিচার কি কালার ব্লাইন্ড?’
মেয়ের ছোটবেলার মজাদার গল্পে বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতির কথাই বোঝাতে চেয়েছেন অমর্ত্য। কে, কাকে, কেন, কী বলছে বোঝা মোটেও সহজ নয়! সল্টলেকে ‘অমর্ত্য সেন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’ বৈচিত্র্যে সমন্বয় শীর্ষক আলোচনায় অমর্ত্যবাবু বললেন, ‘দুনিয়া জুড়েই জনে জনে মানসিক যোগাযোগের পথে কাঁটা। ধর্মে ধর্মে, জাতিতে জাতিতে ভয়ঙ্কর ভুল বোঝাবুঝিও বড় সমস্যা। এর জন্য পরস্পরের বিষয়ে অশিক্ষা, অজ্ঞানতাও দায়ী।’
এদিন ভারতে হিন্দু ও মুসলমান – এই দুই সম্প্রদায়ের সম্পর্কের ঐতিহ্য প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র দারাশুকোর কথা টানেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দারাশিকো উপনিষদকে গোটা পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দেন। সংস্কৃত থেকে প্রথম পার্সি ভাষায় তিনি উপনিষদ অনুবাদ করেন। সেই অনুবাদ থেকেই পরবর্তীকাল জার্মান ও ইংরেজি ভাষায় উপনিষদের অনুবাদ করা হয়।’