বাংলা হান্ট ডেস্ক : বদলাচ্ছে ভূস্বর্গ। বদলাচ্ছে উপত্যকার রাজনীতি। সেখানে আর কেউ সেনাদের উপর পাথর ছোঁড়েনা। বরং শহিদ সেনাদের সম্মানে বের হয় মোমবাতি মিছিল। এক সময় যে কাশ্মীর (Kashmir) থেকে হাজার হাজার কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিতকে (Kashmiri Hindu Pandit) বাস্তুহারা হতে হয়েছিল, সেখানেই শোনা গেল ভারতীয় সংস্কৃতির শঙ্খনাদ।
চৈত্র নবরাত্রিতে নিয়ন্ত্রণ রেখায় (Line of Control) প্রতিষ্ঠা হল দেবী সারদার মূর্তি। স্বাধীনতার পর ৭৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। এদিন মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপল্যক্ষে দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি ভাষণ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার কুপওয়ারা জেলার টিটওয়াল এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হল এই দেবী মূর্তি। স্বাধীনতার পর প্রথমবার নিয়ন্ত্রণ রেখার এতো কাছে তৈরি করা হয়েছে হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা হল।
সম্প্রতি শেষ হয় নবনির্মিত ওই মন্দিরের নির্মাণ কাজ। এর পরই দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চৈত্র নবরাত্রিকে বেছে নেয় মন্দির কর্তৃপক্ষ। উপত্যকায় প্রতিষ্ঠা হওয়া দেবী সারদার এই মূর্তি তৈরি হয়েছে কর্ণাটকের শিঙ্গেরি মুটে। সেখান থেকে ইতিমধ্যেই তা কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘কাশ্মীরি হিন্দু নববর্ষ’। যার স্থানীয় নাম ‘নভরেহ’। নবনির্মিত মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেই কারণেই এই দিনটিকে বেছে নেন স্থানীয় হিন্দুরা।
স্বাধীনতার আগে কুপওয়ারার টিটওয়ালে দেবী সারদার মন্দির ছিল। ওই সময় কিষেণগঙ্গা নদীর তীরে একটি গুরুদ্বারের সংলগ্ন এলাকায় ছিল এই দেবীর মন্দির। কিন্তু ১৯৪৭-এ কাশ্মীর আক্রমণ করে পাক হানাদাররা। হামলাকারীদের হাতে ধ্বংস হয় দেবীর মন্দির। ঘটনার কয়েক বছর পর থেকেই ওই এলাকায় আবারও দেবী মন্দির তৈরির দাবি উঠছিল।
ঐতিহাসিকদের দাবি, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের এই সারদা মন্দিরের গুরুত্ব ছিল অসীম। ভারতীয় উপমহাদেশ তো বটেই, মধ্য এশিয়া থেকেই পুণ্যার্থীরা এখানে আসতেন। বুধবার মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে টিটওয়ালে হিন্দু ব্রাহ্মণদের বিরাট সমাগমের আয়োজন করা হয়। মন্দিরের কর্তৃপক্ষের দাবি, শতাধিক ব্রাহ্মণ আসেন সেখানে।
নবনির্মিত এই মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে উৎসাহের খামতি ছিল না এলাকার মানুষদের। ‘ভবিষ্যতে এই এলাকা তীর্থক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠবে। ফলে সারা বছর লেগেই থাকবে পর্যটকদের ভিড়। বাড়বে রোজগারও।’ এমনই আশার আলো দেখছেন কুপওয়ারার বাসিন্দারা।