অন্য রুপে মুর্শিদাবাদের ASP, দরিদ্র ফলওয়ালার সাহায্যার্থে নিজেই বিক্রি করলেন পেয়ারা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ লকডাউন কালে করোনা নিয়ম না মানা আম জনতার প্রতি বেশ কিছুটা রুক্ষ ব্যবহার করতে হয়েছে পুলিশকে। একাধিক সময়ে সামনে এসেছে এমন সব ভিডিও যেখানে দেখা গিয়েছে জোর করে দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে পুলিশ। কখনও বা নিয়ম না মানা জনতাকে কান ধরে উঠবোস করতেও দেখা গিয়েছে পুলিশের সামনে। এবার সামনে এলো সেই পুলিশেরই এক উচ্চপদস্থ কর্মচারীর মানবিক মুখ।

ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরে। সকালবেলা বাজার করতে বাজারে এসেছিলেন লালবাগ থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার। বাজারের এক ফল-ব্যবসায়ী তাকে চিনতে না পেরেই বলে বসেন,  ‘‘দাদা, আমার ভ্যানটা একটু দেখবেন। আমি খেয়ে আসি।’’ ফল বিক্রেতার এমন সরল আবেদনে সাড়া না দিয়ে পারেননি তন্ময়। শুধু ভ্যানের খেয়াল রাখা নয়, ওই কুড়ি মিনিট রীতিমতো দোকানদারিও চালান তিনি। ফল কিনতে আসা খরিদ্দারদের বিক্রি করেন পেয়ারা। বিক্রেতা ফিরে এলে তাকে হিসেব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান তন্ময়।

নিজের পরিচয় কাউকে দেননি তিনি। কিন্তু যুগটা সোশ্যাল মিডিয়ার। আর এখানে পরিচয় গোপন রাখার যথেষ্ট কষ্টকর। এরইমধ্যে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী চিনতে পেরে গোটা ঘটনাটি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বেশ কিছু ছবিতে দেখা যায় দাঁড়িপাল্লা দিয়ে পেয়ারা বিক্রি করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, “যাকে ছবিতে পেয়ারা বিক্রি করতে দেখছেন, তিনি পেয়ারা বিক্রেতা নন, তিনি লালবাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজ সকালে বহরমপুর এ শখের বশে বাজার করতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ পেয়ারা বিক্রেতা বলে ওঠেন, দাদা একটু দেখবেন আমার ভ্যানটি আমি টিফিন করে আসি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) পেয়ারা বিক্রেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।”

তন্ময় অবশ্য এতটা ভাবতে পারেননি, ঘটনা জানার পর তিনি বলেন, মাঝেমধ্যেই এভাবে পরিচয় গোপন করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান তিনি। যাতে মানুষের মন বুঝতে পারেন এবং বুঝতে পারেন শহরের বর্তমান অবস্থা। কিন্তু খবরটা যেভাবে ভাইরাল হবে তা আদৌ বুঝতে পারেননি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। আর সেই বিক্রেতা তিনি কী বলছেন? গোটা ঘটনা শুনে তিনি তো রীতিমত অবাক। তিনি বলেন,  ‘‘আমি প্রতিদিন এই এলাকায় পেয়ারা বিক্রি করি। শনিবার সকালেও দোকান খুলে বসেছিলেন। আমি না চিনেই ওঁকে পেয়ারার ভ্যানটি দেখতে বলি। আমি তখন জানতাম না উনি এতবড় একজন পুলিশ অফিসার। উনি যে নিঃশব্দে আমার দাবি মেনে নেবেন, ভাবতেই পারিনি। তবে আমি খুশি উনি এ ভাবে আমার ভ্যান থেকে পেয়ারা বিক্রি করায়।’’

 

Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর