বাংলাহান্ট ডেস্ক : মঙ্গলবার কলকাতার একটি নার্সিংহোমে (Kolkata Nursing Home) শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন বীরভূমের “এক টাকার” ডাক্তার পদ্মশ্রী সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Sushovan Banerjee)। আর তাঁর মৃত্যুতে শোখে দুঃখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। ডাক্তারবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়েই কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে ধরে আসে তাঁর গলা। কান্না ভেজা গলাতেই কোনওরকমে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন তিনি। কথা বলার সময় বার বার চোখের জল মুছতেও দেখা যায়।
সবার কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন এক টাকার ডাক্তার হিসাবে। বহু বছর ধরে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে মাত্র ১ টাকায় চিকিৎসা করছিলেন ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Sushovan Banerjee)। মূলত সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের পাশে দাঁড়াতেই তিনি এই বিরাট কর্মযজ্ঞে সামিল হন।
এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারেন না। মূলত তাঁদের জন্যই মাত্র ১ টাকার ফি নিয়ে চেম্বার চালাতেন ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর চেম্বারে বহু ধনী মানুষও যেতেন চিকিৎসা করাতে। তাঁদের থেকেও একই ফি নিতেন বোলপুরের এই ডাক্তার। কিন্তু এই ১ টাকাই কেন? বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে কারওর যাতে আত্মসম্মানে না বাঁধে, সেজন্যই তিনি ১ টাকা ফি নিতেন বলে জানিয়েছিলেন। বহু দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষেরা তাঁর কাছে আসতেন চিকিৎসা করাতে। কেবল ফির জন্যই নয়, ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Sushovan Banerjee) রোগীদের কাছে ছিলেন এক রকম ‘ধন্বন্তরী’।
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Sushovan Banerjee)। সম্প্রতি কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিট নাগাদ ওই হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুশোভনবাবু (One Rupee Doctor)। এই মূল্যবৃদ্ধির সময় ২০২২ সালেও মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে রোগী দেখতেন। থাকতেন বোলপুরের হরগৌরী তলায়। সেখানেই ছিল তাঁর চেম্বার। তাঁর কাছে চিকিৎসা করানোর জন্য দল বেঁধে আসতেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। কোনও রোগী চেম্বারে পৌঁছতে না পারলেও অসুবিধা হত না। অসুস্থ শরীর নিয়ে রোগীর দুয়ারে নিজেই পৌঁছে যেতেন সুশোভন বন্দোপাধ্যায়।
রাজনীতির সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল সুশোভনবাবুর। একসময় কংগ্রেস করতেন। ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের হয়ে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন। বোলপুর থেকে প্রথমবার বিধায়ক হন তিনি। পরে যোগ দেন তৃণমূলে। তৃণমূলের প্রথম জেলা সভাপতিও নির্বাচিত ছিলেন। এরপর হঠাৎ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। একজন চিকিৎসকের জীবন নিয়েই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।
তবে তিনি রাজনীতি জগৎ ছেড়ে চলে এলেও বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি তাঁকে ভোলেননি। তাঁদের মধ্যে তৈরি হয় পারিবারিক সম্পর্ক। তাই তো এক টাকার ডাক্তারবাবু প্রয়াণে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনুব্রত। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না তৃণমূল নেতার। বারবার একটাই কথা বলছিলেন। মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁদের পারিবারিক সম্পর্কের কথা। চিকচিক করে উঠেছিল চোখের কোন, গলা ধরে আসছিল ক্রমশ। নিজের আবেগকে আটকাতে পারছিলেন না অনুব্রত।