নিজস্ব প্রতিনিধি,বোলপুর,বীরভূমঃ বীরভূমে তৃনমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নিজস্ব গ্রাম নানুর থানার অন্তর্গত হাটসেরান্ডি। সেখানেই সোমবার দুপুরে শুরু হয় বিজেপি-তৃনমূলের সংঘর্ষ। যার জেরে ওই এলাকায় চলে গুলি,চলে মারধর। এই ঘটনায় নিহত হন শঙ্করী বাগদি নামে এক মহিলা। আহত হয় পাঁচ জন। অভিযোগ,মৃতার ছেলে উদয় বাগদি বিজেপি করে বলেই তৃনমূল আশ্রিত দুস্কৃতিরা প্রথমে তাকে গুলি ছুঁড়তে গেলে তার মা শঙ্করী বাগদি সামনে চলে আসে। ও গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এই ঘটনার ফলে ওই এলাকায় একটা চাপা উত্তেজনা এখনো যথেষ্ট পরিমাণে।
মৃত ওই মহিলার আত্মীয় বৈদ্যনাথ বাগদি জানিয়েছিলেন,“মালপাড়ার খুদু বাগদি, কালাম বাগদি, সন্তোষ বাগদি, রঘুনাথ বাগদি, মেনকা বাগদি, মিলন বাগদি আরো কয়েকজন দল বেঁধে বন্দুক, আরো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। তারপর আমাদের কয়েকজনকে মারধর করে শঙ্করী বাগদীকে গুলি করে দিয়ে চলে যায়। গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।”
ঘটনার পর বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আহত বিজেপি কর্মীরা। তাদের শারীরিক অবস্থার খবর নিতে সত্ত্বর হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছিলেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ তথা যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা সহ বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল এবং অন্যান্য বিজেপির নেতা-কর্মীরা। বিজেপির নেতারা দাবি করেন,আহত এবং মৃত সকলেই বিজেপি কর্মী সমর্থক। তবে এই ঘটনায় গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার রাজনৈতিক পরিস্থিতির পালাবদল ঘটে।তৃণমূলের তরফ থেকে মৃত শঙ্করী বাগদিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয় বীরভূম জেলার তৃনমূলের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষ,দন্ডপ্রতাপ তৃনমূল নেতা কাজল শেখ,ওমর শেখ সহ একাধিক তৃনমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশি তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন,‘মৃত শঙ্করী বাগদি এবং তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল দলের সাথে যুক্ত। এমনকি তার ছেলেও তৃনমূল করে আসছে।’ এইদিকে মৃতার ছেলে জানায়,‘যারা আমার মাকে মেরেছে তারাও তৃণমূল করে।আমিও ছোটোবেলা থেকে তৃনমূল করে আসছি।’ কিন্তু এমন দড়ি টানাটানি ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। প্রশ্ন উঠছে,তাহলে কী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই মর্মান্তিক পরিণতি!
যদিও এই বিষয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে অস্বীকার করে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ জানান,“সবেমাত্র মাকে হারিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে ও সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন কিনা তা বুঝতে পারছেন। তবে তারা এফআইআর করেছে।”
কিন্তু এই ঘটনায় তৃনমূলকে দোষারোপ করে বীরভূমের বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল জানিয়েছিলেন,“ওটা অনুব্রতবাবুর গ্রাম।আর লোকসভা ভোটে বিজেপি ২২৩ ভোটে লিড পেয়েছে। এটাই কারণ। আর সেইদিন থেকেই ওরা বিজেপি যারা করে তাদের উপর নানা অত্যাচার করে আসছে। আর যেদিন থেকে বিজেপি তৃনমূল দলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে সেইদিন থেকেই ওদের সন্ত্রাস শুরু হলো। আর সেই সন্ত্রাসের বলির শিকার হলো আমাদের বিজেপি কর্মীর মা শঙ্করী বাগদি। তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো। তৃনমূল তো এখন একের পর এক খুন করবে,সন্ত্রাস করে,আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। এই রাজনীতি তো এখন তৃনমূলের শুরু হয়েছে। আর এই সমস্ত বিষয়ে পুলিশ তাদেরকে মদত করবে। আর আজকের ঘটনায় আমরা আবারও প্রশাসন ও তৃনমূলকেই দায়ী করলাম। এইদিকে দেখুন তিন চার মাসের মধ্যে বীরভূমে ৬-৭ টা খুন হয়ে গেল। এটা কী চলছে? কাশ্মীরে এত খুন আছে? বীরভূমে এত খুন চলছে আর ওইদিকে বীরভূমে তৃনমূলের বড়ো নেতা বলছে,চরম শান্তি,চরম উন্নয়ন চলছে। আর তারই নমুনা মাসে তিনটে,চারটে করে খুন।”
এইদিকে বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরা জানিয়েছিলেন,“মৃতার ভাইও বিজেপি করে বলে শাসকদলের ভয়ে গ্রাম ছাড়া।”
বিজেপি রাজ্য সহ-সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী সিউড়িতে এসে জানিয়েছিলেন, “বীরভূমের নানুর থানার অন্তর্গত হাটসেরান্ডি গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে তার কারণ হলো গত লোকসভা নির্বাচনে ওই এলাকায় বিজেপি তৃণমূলের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছিল।”
যদিও বীরভূম জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক সুদিপ্ত ঘোষের অভিযোগ, “২৩ শে মার্চের পর থেকে জেলায় যা ঘটে চলেছে তাতেই বিজেপি রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করছে, তাতেই সে কোন পারিবারিক ঘটনা হোক, অথবা ত্রিকোণ প্রেমের ঘটনা হোক সবকিছুতেই।”
ইতিমধ্যেই,হামলার সেই ঘটনায় পুলিশ মঙ্গলা বাগদি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাকে গতকূ বোলপুর আদালতে পেশ করা হয়।