বাংলাহান্ট ডেস্ক: আমাদের আশেপাশে খুঁজলে এমন অনেক ক্যানসার (Cancer) আক্রান্ত বা বিজয়ীর কাহিনি পাওয়া যাবে যা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। ধনী বা দরিদ্র, এই রোগ বাছবিচার করে না। মৃত্যুর সঙ্গে প্রতিক্ষণে লড়াই করতে থাকা মানুষগুলো নিজেদের অজান্তেই অন্যদেরও অনুপ্রেরণা দেন জীবনের মূল্য বোঝার। এমনি এক কাহিনি রয়েছে পরিচালক অনুরাগ বাসুরও (Anurag Basu)।
রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন জনপ্রিয় পরিচালক। চিকিৎসকরা বাঁচার আশার এক রকম ছেড়েই দিয়েছিলেন। এমনকি তাঁকে এও জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আথ মাত্র দু সপ্তাহের অতিথি এই পৃথিবীতে। সে সময়ে অনুরাগের স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কী সময় যে গিয়েছে তা মনে করে এখনো শিউড়ে ওঠেন পরিচালক।
শুরুতে মুখের মধ্যে বড় বড় ক্ষত তৈরি হত অনুরাগের। চিকিৎসকরা তখনি তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু পাত্তা দেননি অনুরাগ। তিনি তখন নিজের ছবির কাজে ব্যস্ত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের সবথেকে কঠিন সময়টা নিয়ে মুখ খুলেছেন অনুরাগ।
সেখানেই তিনি জানান, কীভাবে এই খারাপ খবরটা জানতে পারলেন যে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। তিনি জানান, সেদিন সন্ধ্যার মধ্যেই মুকেশ ভাট তাঁকে শুটিং বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। প্রথম খটকাটা তাঁর তখনি লেগেছিল। তারপর হাসপাতালে নিজের বাবা মায়ের চিন্তিত মুখগুলো দেখেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে কিছু একটা খারাপ হয়েছে।
লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অনুরাগ। প্রথম প্রথম সব ঠিকঠাক থাকলেও পরে তাঁর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। কোনো ওষুধেই কাজ হচ্ছিল না পরিচালকের। এক সময়ে তাঁর বাবা মা ও হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দেন। সন্তানের এই অবস্থা চোখে দেখতে পারছিলেন না তাঁরা।
মুখ ফুলে গিয়েছিল অনুরাগের। দম বন্ধ হয়ে আসত। কোনো ওষুধ, চিকিৎসাতেই সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি। পরিচালকের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে তিনিও খবর পেয়ে যান। শেষমেষ টাটা মেডিকাল হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হতে পরিস্থিতি একটু ভাল হয় অনুরাগের।
পরিচালক বলেন, তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন যে তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। তাঁর ওই অবস্থায় পাশে থেকেছেন মহেশ ভাট, অনুপম খের। টাটা হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সুনীল দত্ত। যারা যারাই তাঁকে চিনতেন সকলেই এসে খোঁজ নিয়েছেন। রক্ত লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করেছেন।
অনুরাগ বলেন, “আমি এটাও জানি না আমার শরীরে কার রক্ত বইছে। কে আমার জন্য রক্ত দিয়েছে।” ওই অবস্থাতেও কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। চিকিৎসার জন্য টাকা কম পড়ায় টিভিতে কাজ করেছেন তিনি। বানিয়েছেন ‘গ্যাংস্টার’ ছবিটি। বেঁচে থাকার জেদ, চিকিৎসকদের দক্ষতা এবং ঈশ্বরের কৃপায় আজ সম্পূর্ণ সুস্থ অনুরাগ বাসু।