বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাজ্যের (West Bengal) অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রফেশনাল অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউশনের (Association of Professional Academic Institutions, APAI) তরফে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-অ্যাডমিশনের জন্য প্রি-কাউন্সেলিংয়ের লক্ষ্যে তিনদিনের একটি কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। যেটি বিবেচিত হচ্ছে “APAI Pre-Counselling Fair 2024” হিসেবে। গত শনিবার অর্থাৎ ৬ জুলাই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মহাসমারোহে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এমতাবস্থায়, ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের (West Bengal) শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু থেকে শুরু করে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত, WBJEE-র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক দিব্যেন্দু কর, WBJEE-র চেয়ারপার্সন অধ্যাপিকা সোনালী চক্রবর্তী ব্যানার্জি, APAI, WB-এর প্রেসিডেন্ট সর্দার তারাঞ্জিত সিং, APAI, WB-এর জেনারেল সেক্রেটারি সত্যম রায়চৌধুরী সহ APAI-এর কোষাধ্যক্ষ অলোক টিব্রেওয়াল উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই প্রি-কাউন্সেলিং ফেয়ার রাজ্যের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পড়ুয়াদের সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি সামগ্রিকভাবে তাঁদের সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে এবং তাঁদের অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে শুরু করে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি, ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এক্সামিনেশন (WBJEE)-এর মতো বৃহৎ সংস্থাগুলি দ্বারা সমর্থিত ও স্বীকৃত এই উদ্যোগটি তার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গুরুত্ব যথেষ্টভাবে বৃদ্ধি করেছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মাধ্যমে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত পেশাদার ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষার সুযোগ অন্বেষণে সাহায্য করার পাশাপাশি তাদের কর্মজীবন সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফর্ম উপলব্ধ করেন। প্রি-কাউন্সেলিং ফেয়ারে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের পাশাপাশি, ভর্তির পদ্ধতি, পাঠ্যসূচির বিষয় এবং স্কলারশিপের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। যা প্রত্যক্ষভাবে পড়ুয়াদের সাহায্য করবে। জানিয়ে রাখি যে, এই বছর APAI-এর তরফে WBJEEEB-এর শীর্ষ ১০ স্থানাধিকারীকে সম্মানিত করা হবে।
এদিকে, এই মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, “পেশাগত শিক্ষায় সাফল্যের পাশাপাশি আমাদের দেশের মঙ্গলের জন্য দায়িত্বশীল নাগরিক হতে হবে। আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, আমি তাঁর অকৃত্রিম পথে বিশ্বাস করি। বিশ্ব মঞ্চে ভারতকে উন্নীত করার জন্য পড়ুয়ারাই প্রধান অস্ত্র। শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। ভারতের প্রতিটি শিশুর জন্য এটি বাধ্যতামূলক, যেমনটি আমাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে এবং ডিজিটাল যুগে রয়েছি। যেখানে তথ্যই মুখ্য। জ্ঞান ছাড়া শিক্ষার উন্নতি হয় না। পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সময়, ডিজিটাল বিশ্বের গুরুত্ব মনে রেখে বিষয়গুলি বুদ্ধিমানের মতো বেছে নিতে হবে। নিজেকে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করতে সৃজনশীল জ্ঞান গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা অপরিহার্য এবং আমি পড়ুয়াদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এই সুযোগটি কাজে লাগাতে অনুরোধ করছি।”
পাশাপাশি, এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত বলেন, “প্রাক-কাউন্সেলিং সেশন প্রশংসনীয়ভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছাত্রদের সাহায্য করবে। তাদের কোন স্ট্রিম বা বিষয়গুলি অনুসরণ করা উচিত সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করবে। প্রায়শই শিক্ষার্থীরা কোন স্ট্রিম বা কোন বিষয় বেছে নিতে হবে সেই নিয়ে বিভ্রান্ত হয়। প্রাক-কাউন্সেলিং এর লক্ষ্য এই উজ্জ্বল মনদের সাহায্য করা। তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশ করা। এই উদ্যোগটি সমাজের জন্য একটি মূল্যবান অবদান।”
এদিকে, WBJEEB-এর চেয়ারপার্সন অধ্যাপিকা সোনালী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “এই জমায়েত বিশেষভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার এবং প্রযুক্তির পড়ুয়াদের আগ্রহ পূরণ করবে। যেটি তাদের পেশাগত শিক্ষার জন্য অপরিহার্য। ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এক্সাম বোর্ড, ১০ টি স্টেট ইউনিভার্সিটি, ৯ টি স্টেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৭ টি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এবং ৫৬ টি প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অর্থাৎ মোট ৮৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬০ টি বিভিন্ন স্ট্রিম জুড়ে ভর্তির সুবিধা প্রদান করছে। এই বছরের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ১,১২,৯৬৩ জন পড়ুয়া সফল হয়েছে। এমতাবস্থায়, এই পদক্ষেপ তাদের প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করবে। ১০ জুলাই সন্ধ্যায় এই ই-কাউন্সেলিং শুরু হবে। এই উদ্যোগ পড়ুয়াদের তাদের উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে এবং তাদের সঠিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাই করার মাধ্যমে কর্মজীবনের পথের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাবিদদের এক ছাদের নিচে একত্র করার বিষয়ে APAI-এর লক্ষ্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”
পাশাপাশি WBJEEB-র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক দিব্যেন্দু কর জানিয়েছেন, “APAI একটি প্রাক-কাউন্সেলিং সেশনের আয়োজন করেছে যেখানে শিক্ষার্থীরা সরাসরি অংশগ্রহণকারী কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একটি ভালো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন যে কাউন্সেলিং শুরু হবে ১০ জুলাই। ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এবং এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করা হয়েছে। তবে, এখনও পড়ুয়াদের প্রশ্ন এবং সন্দেহ থাকতে পারে। আমি অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করছি যে তাঁরা যেন ভালোভাবে সমস্ত তথ্য পর্যালোচনা করেন। পাশাপাশি অনুগ্রহ করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের ওয়েবসাইট লক্ষ্য রাখুন বিস্তারিত তথ্য, প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, কেরিয়ার অপশন এবং উপলব্ধ আসন সংক্রান্ত তথ্যের জন্য।”
আরও পড়ুন: ঘুম উড়ল মুকেশ আম্বানির! Jio-কে ঝটকা দিয়ে BSNL আনল বিরাট উপহার
এদিকে, APAI, WB-র প্রেসিডেন্ট সর্দার তারাঞ্জিত সিং জানিয়েছেন, “APAI-তে, আমরা বিশ্বাস করি যে শিক্ষা হল অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনের ভিত্তি। প্রি-কাউন্সেলিং ফেয়ার হল পশ্চিমবঙ্গের যুব সমাজকে ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতির মূর্ত প্রতীক। সুযোগ এবং সাফল্যকে মাথায় রেখে শীর্ষস্তরের অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষার্থীদের একত্র করে আমরা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই। যাতে শিক্ষার্থীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
আরও পড়ুন: ফের কামাল করে দেখাল ভারত! দেশের মাটিতেই তৈরি হল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী “অ-পারমাণবিক” বোমা
এছাড়াও APAI, WB-র জেনারেল সেক্রেটারি সত্যম রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, “এই বছর, আমরা একটি হাইব্রিড ফর্ম্যাটে প্রি-কাউন্সেলিং ফেয়ারের আয়োজন করেছি। যাতে অন্য রাজ্যের পড়ুয়ারা অংশগ্রহণ করতে পারে এবং কেউ যাতে এটি মিস না করে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত, অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রফেশনাল একাডেমিক ইনস্টিটিউশন (APAI) এর লক্ষ্য হল শিক্ষার গৌরব পুনরুদ্ধার করা। এবং APAI-এর বার্ষিক প্রি-কাউন্সেলিং ফেয়ার কোর্স এবং কলেজগুলি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করে। যার ফলে পড়শি রাজ্যের পড়ুয়া এবং অভিভাবককরাও আকৃষ্ট হন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিবেকানন্দ মেরিট স্কলারশিপ এবং স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মতো স্কিমগুলি উচ্চ শিক্ষাকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের কাউন্সেলিং ১০ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে। আমরা লক্ষ করেছি ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে আগত পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আমাদের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের প্রযুক্তি-চালিত, উদ্ভাবনী এবং টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কেরিয়ার পছন্দ করতে সাহায্য করা।”