বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিগত কিছুদিন ধরেই আবাস যোজনার (Pradhan Mantri Awas Yojana) তালিকায় উঠে আসছে একের পর এক শাসক দলীয় নেতাদের (TMC Leaders) নাম। পেল্লায় পেল্লায় পাকা বাড়ি, তবুও আবাস যোজনার তালিকায় নথিভুক্ত রয়েছে তাদের নাম। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পরে গেছে গোটা রাজ্যে। গরিবদের ন্যায্য পাওনা শুষে নিয়ে আরও ধনী হয়ে উঠছে শাসক দলের নেতারা, ঠিক এমনই অভিযোগ উঠে এসেছে বাংলার বহু প্রান্ত থেকে। আর এরপরই ঘটল তাজ্জব ঘটনা। আবাস যোজনার তালিকা থেকে তৃণমূল নেতাদের নাম বাদ দেওয়ার হিড়িক পড়ল বর্ধমানে (Bardhaman)।
ঘটনার সূত্রপাত হয় আবাস যোজনার দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকায় উপপ্রধানের চারতলা বাড়ির ছবি প্রকাশ্যে আসতেই। এরপরই একের পর এক নাম বাতিলের হুড়োহুড়ি পড়েছে তৃণমূলে। নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সমীক্ষক দলকে তো বটেই এমনকি চিঠি পাঠানো হয়েছে বিডিওকেও।
কোন কোন নেতা অংশগ্রহণ করলেন নাম বাতিলের দৌড়ে? বর্ধমানের রায়না ১ ব্লকের নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, সমসপুর গ্রামের শেখ মহম্মদ ইসমাইলের বাবা শেখ আবুল মসুদ ও শ্বশুর গোলাম মর্তুজার নাম আবাস প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকায় রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে বাড়ি নিতে ইচ্ছুক নন বলেই মন্তব্য তাদের। চিঠিতে শেখ আব্দুল মাসুদের দাবি, ‘‘সমীক্ষক দল আমার বাড়ির অবস্থা দেখে আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছিল। কিন্তু আমার বাড়ি ভালই আছে। সেই জন্য আমি আর বাড়ি নিতে ইচ্ছুক নই।’’ উপপ্রধান বলেন, ‘‘আমি দেখলাম তালিকায় আমার বাবা ও শ্বশুরের নাম রয়েছে। তারা জানালেন, বাড়ি পাওয়ার যোগ্য হলেও তারা আবাস প্রকল্পের সুবিধা নিতে চান না। আমিও আর বিতর্কে যেতে চাইনি।’’
এরপর, রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী পার্বতী ধাড়া মালিকের ছেলে, আড়ুই গ্রামের তন্ময় মালিকের নামও আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে। বিডিও-র কাছে ছেলের নাম বাতিলের আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, তার ছেলের পাকা বাড়ি রয়েছে। সেই কারণে ওই প্রকল্পে বাড়ি নিতে ইচ্ছুক নন তারা।
খণ্ডঘোষের গুঁইর গ্রামের সুচিত্রা দত্তেরও নাম রয়েছে পাকা বাড়ির তালিকায়। এদিন তিনিও ওই তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার জন্য বিডিওকে আবেদন করেছেন।
মেমারির বাগিলা পঞ্চায়েতের কিসকিন্দা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য জিন্নাতারা বেগম, তার স্বামী গিয়াসুদ্দিন শেখ-সহ ছ’জন পরিজনের নামও রয়েছে আবাস তালিকায়। নাম বাতিলের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তারাও।
রাধাকান্তপুরের এক তৃণমূল নেতার দোতলা বাড়িতে রঙের পোঁচ পড়ছে। ওই নেতার বাবার নামও আবাস তালিকায় রয়েছে। তিনিও নাকি নাম বাদ দিতে চিঠি দিয়েছেন বিডিকে।
সেহেরা অঞ্চলের প্রধান দয়াবতী বাগের ছেলে সুব্রত বাগেরও নাম রয়েছে তালিকায়। তবে তার অভিযোগ তার নাম কী ভাবে তালিকায়, তা তিনি জানেন না। তার দাবি, “এই নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে দেখে নাম বাদ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নাম তোলার সময়ে আমরা মাটির বাড়িতে থাকতাম।’’
খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাহাঙ্গির শেখের কেশবপুর গ্রামে চারতলা বাড়ি রয়েছে। তবে তার স্ত্রী-সহ চার জনের নাম রয়েছে আবাস তালিকায়। অভিযোগ ওঠার পর তিনিও ছুট লাগান নাম কাটাতে।
তবে তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু এবিষয়ে বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষের উন্নতি হয়েছে। তার ছোঁয়া পঞ্চায়েতের সদস্যদেরও লেগেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার তৃণমূল করেন না বলেই স্বেচ্ছায় প্রকল্প থেকে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করছেন তারা।’’
অন্যদিকে এই বিষয়ে শাসক দলকে বিধঁতে দেরি করেনি বিজেপি। এবিষয়ে বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের পাল্টা দাবি, ‘‘বোধোদয় হলে এত দিন নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেননি কেন? নিজেদের মতো করে সুবিধা পেতে নাম তুলে রেখেছিল তৃণমূল। এখন কেন্দ্রের চাপে সব ঘেঁটে গিয়েছে।’’