বাংলা হান্ট ডেস্ক : দিকে দিকে গন্ডগোল! মনোনয়ন পর্ব থেকেই যে অশান্তি শুরু হয়েছে তা চলছে এখনও। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্য জুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন জনা দশেক মানুষ। পুরো পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election) উপলক্ষে নিহতর সংখ্যা ৩০ ছুঁই। রাস্তায় নামতে হয়েছে স্বয়ং রাজ্যপালকেও। বাংলার অস্থা দেখে চোখের জলও ফেলতে হয়েছে সিভি আনন্দ বোসকে (C.V. Ananda Bose)। এই অবস্থা উঠে আসছে রাজ্যে ৩৫৫ ধারা (Article 355) প্রয়োগের দাবি।
দেখে নেওয়া যাক রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কোন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কী কী বলছেন :
শঙ্কুদেব পন্ডা : বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব বরাবরই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধ তীব্র আক্রমণ শানিয়ে এসেছেন। আর এদিন তিনি সরাসরি বলেই দিলেন রাজ্য সরকারের পক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা আর সম্ভব নয়। শীঘ্রই লাগু হোক ৩৫৫ ধারা। শঙ্কু বললেন, ‘পশ্চিমবাংলায় নির্বাচনের যা পরিস্থিতি তাতে অবিলম্বে ৩৫৫ জারি করা উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচন এই রাজ্য সরকারকে রেখে সম্ভব নয়।’
কেয়া ঘোষ : বিজেপি নেত্রী তথা রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র কেয়া ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থার কথা বলতে গিয়ে তুলে আনেন মনিপুরের কথা। তিনি বলেন, ‘মনিপুর নিয়ে কথা হচ্ছে, মনিপুরের ৩৫৫ নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে নির্বাচন হচ্ছে না। আর আমাদের পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের বলি ইতিমধ্যেই ২৮ জন। কোথাও কোথাও সকাল ৮টার মধ্যে ভোট শেষ হয়ে গেছে। তাহলে এই অরাজকতার জন্য পশ্চিমবঙ্গে কেন ৩৫৫ ধারা জারি করা হবে না?’
প্রীতম দত্ত : তরুণ বিজেপি নেতা প্রীতম পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার কথা বলতে গিয়ে সরাসরি আক্রমণ করে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, ‘শেষ ২৪ ঘন্টায় ১০ জনের প্রাণ কেড়ে নিলেন মাননীয়া। আমরা বারবার আবেদন করছি রাজ্যে ৩৫৫ অথবা ৩৫৬ ধারা লাগু করা হোক। মাননীয় রাজ্যপাল আপনি নিজে এই অপদার্থ নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করেছিলেন। আপনি নিজে বাংলার সব জায়গায় গিয়ে দেখতে পাচ্ছেন রাজ্যের কী অবস্থা। আজ আরও যে কত প্রাণ যাবে তা আমরা জানি না। আপনাকে এবং ভারত সরকারকে আবেদন, যদি বাঙালির প্রাণ বাঁচাতে হয়, তাহলে এখানে অবিলম্বে ৩৫৫ ধারা লাগু করুন।’
নাজিয়া এলাহী : তরুণ এই আইনজীবী বরাবরই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সরকারের উপর। এদিন তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের পর যে হিংসা শুরু হয়েছে তা এখনও পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। আজ একটু মাঠে নেমে দেখুন “শ্রীমতি” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কী রকম হিংসা চলছে। গ্রামে গ্রামে যে হিংসা চলছে তা নির্বাচন কমিশনার কেন দেখছেন না? হাওড়া গ্রামীণে দেখুন, ঘাঁটালে দেখুন, ভাঙড়ে দেখুন। এরপরও কেন ৩৫৫ ধারা লাগু হবে না? আমাদের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী কি চোখ বন্ধ করে নিয়েছেন?
সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে নাজিয়া আরও বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর মনিপুর নিয়ে চিন্তা থাকে, উত্তরপ্রদেশ নিয়ে চিন্তা থাকে। বিহারে গিয়ে চা-বিস্কুট খান উনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ থেকে যে হিংসা চলছে তার কথা উনি কেন বলেন না? উনি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওঁকে তো বলতেই হবে। মনোনয়নের সময় যা মানুষ মারা হয়েছে, যা বোমা গুলি হয়েছে তার কথা তো তাঁকে বলতেই হবে। কেন ৩৫৫ ধারা লাগু হবে না? এই জবাবটা আগে মুখ্যমন্ত্রী দিন।’
প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বিগত কয়েক দিন ধরেই পালন করেছেন ‘গ্রাউণ্ড জিরো’র ভুমিকা। রাজভবনে তৈরি হয়েছে পিস রুম। নির্বাচনের হিংসায় নিহতের পরিবারকে চোখের জলে জানিয়েছেন সমবেদনা। বারবার আক্রমণাত্মক রূপে ধরা দিয়েছেন তিনি। এরপরই প্রবল ভাবে উঠে এসেছে ৩৫৫ ধারা লাগুর দাবি। কী করবেন রাজ্যপাল? সহমর্মিতা দেখাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি? নাকি ৩৫৫ ধারা চাবুক নামিয়ে আনবেন ‘অবাধ্য রাজ্য সরকার’কে শাসন করতে? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই মুহুর্তে বিরাট সম্ভাবনা রয়ে রাজ্যে ৩৫৫ অথবা ৩৫৬ ধারা লাগু হওয়ার। কেন্দ্র তৈরিই রয়েছে, শুধু রাজ্যপালের ইশারার অপেক্ষা। আর তারপরই…