বাংলা হান্ট ডেস্কঃ অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে হলভর্তি শ্রোতাদের সামনে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)। ইংরেজিতে বক্তৃতা দিলেও মাঝেমধ্যেই বাংলায় শোনা যাচ্ছিল ‘মা-মাটি-মানুষ, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী’-র মতো শব্দ। এরপর কথা প্রসঙ্গে উঠে কলকাতায় এখনকার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের বিনিয়োগের কথা। শোনা যায় টাটা গোষ্ঠীর নামও। আর তারপরেই সভাঘরের একেবারে পিছন থেকে আস্তে শুরু করে মৃদু গুঞ্জন।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ঐতিহাসিক ভাষণের বিষয় ছিল ‘সামাজিক উন্নয়ন: নারী, শিশু ও প্রান্তিক অংশের উন্নয়ন’। এই ভাষণ ঘিরে শুরু থেকেই অশান্তির আশঙ্কা ছিল। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের সময় দেখা যায় ব্রিটেনের ৬ সিপিএম সমর্থক প্ল্যাকার্ড হাতে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে গো-ব্যাক স্লোগান দেওয়া থেকে শুরু করে চিৎকার করে তাঁকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলা হয়। এমনকি আরজি কর প্রসঙ্গ টেনে এনে বলা হয় ‘অভয়াকে খুন করেছেন’। আসতে থাকে আরও মুহুর্মুহু প্রশ্ন।
মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) ভাষণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কারা ছিলেন?
মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) ভাষণে প্ল্যাকার্ড হাতে ব্রিটেনের ৬ সিপিএম সমর্থক চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি করায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিক্ষোভকারী সিপিএম সমর্থকদের একহাত নিয়েছেন অরূপ চক্রবর্তী। একটি ফেসবুক পোস্টে ছবি দিয়ে চিহ্নিত করে দেখালেন এদিনের বিক্ষোভকারীরা আসলে কারা ছিলেন। এদিন তিনি ফেসবুকের পাতায় লিখেছেন,’কুকুরের ল্যাজ কোনোদিনও সোজা হয় না। তৃতীয় ছবিতে চিহ্নিত এই চারটে শূন্য আজ অক্সফোর্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার মাঝে গন্ডগোল পাকাতে গিয়েছিল। কিন্তু ওখানেও উপস্থিত বাকি জনসঙ্খ্যার বিচারে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায়, অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। ২০২৬ এ বাংলার মানুষ আবারও এই একই কাজ করে দেবে ২০২১ এর মতো।’
প্রায় একই সুর তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের গলাতেও। তিনি লিখেছেন, ‘সিপিএমের যে দু’চারপিস অক্সফোর্ডে বাঁদরামি করল, এরা দেশ, বাংলার সম্মান ভাবে না।তাদের আমলে কী হয়েছিল, ভুলে গিয়েছে।সব ঘটনা মনে করাতে হবে সারা বাংলায়।আজ সকলের বাধায় লেজ তুলে পালিয়েছে। বক্তৃতায় বাধা কেন? প্রশ্ন করো প্রশ্নোত্তর পর্বে। তা নয়, বাঁদরামিটা এদের সংস্কৃতি।এদের পরিকল্পিত অসভ্যতার খবর আগেই পেয়ে কদিন আগে পোস্ট করেছিলাম।এদের চিহ্নিত করে অনেকে কলকাতা কানেকশন পোস্ট করছেন। ভালো করছেন।রবীন্দ্রসঙ্গীত এরা বোঝে না। ডিজে শুনতে চাইছে।’
সিপিএমের যে দুচারপিস অক্সফোর্ডে বাঁদরামি করল, এরা দেশ, বাংলার সম্মান ভাবে না।
তাদের আমলে কী হয়েছিল, ভুলে গিয়েছে।
সব ঘটনা মনে করাতে হবে সারা বাংলায়।
আজ সকলের বাধায় লেজ তুলে পালিয়েছে। বক্তৃতায় বাধা কেন? প্রশ্ন করো প্রশ্নোত্তর পর্বে। তা নয়, বাঁদরামিটা এদের সংস্কৃতি।
এদের…— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) March 27, 2025
অক্সফোর্ডে লোকভর্তি সভাঘরে এহেন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেকে সংযত রেখে এদিন মমতা (Mamata Banerjee) বললেন ‘ইউ আর মাই সুইট ব্রাদার। আই লভ ইউ অল। প্লিজ় শান্ত হোন। আমি আপনাদের মিষ্টি দেব।’ একইসাথে খুব শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তিনি আরও বললেন, ‘আমার বাম, অতিবাম, সাম্প্রদায়িক শক্তির বন্ধুদের বলব, আপনাদের আমি চকোলেট দেব। আপনাদের মতাদর্শকেও চকোলেট খাওয়াব।’
আরও পড়ুন: ‘জীবনের পথচলা থেকেই তৈরি’! অক্সফোর্ডে বক্তৃতার আগে প্রস্তুতি নিয়ে যা বললেন মমতা
হাসিমুখে এইভাবেই এদিন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন মমতা (Mamata Banerjee)।বিক্ষোভকারীদের স্লোগান এবং পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়েই তিনি বললেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে খুব ভালবাসি। আপনারা আপনাদের পার্টিকে আরও মজবুত করুন। যাতে আমার সঙ্গে তারা লড়তে পারে!’ পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বললেন, ‘আমাকে অপমান করছেন করুন। দেশকে অপমান করবেন না।’
বিক্ষোভকারীদের একের পর এক প্রশ্নের সামনে এইভাবেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতোই প্রতিরোধও করেছেন তিনি। তাই খানিক চ্যালেঞ্জের সুরেই এদিন তিনি বলেছেন, ‘আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমায় ভাল করে কোনও কাজ করে দিতে বললে ঘর মুছে, কাপড় কেচে, রান্না করে বা বাসন মেজে দিতে পারব। কিন্তু ভয় দেখালে হবে না। আমি ভয় পাই না। আমি আমার মাথা নত করি একমাত্র জনতার সামনে। আর কারও সামনে নয়।’ পরে তিনি বললেন,‘আমি মানসিক ভাবে তৈরি হয়েই এসেছিলাম।’