বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ওজন প্রায় ১০২ কিলোগ্রাম। নাম রতন রায়। রানাঘাট থানার এএসআই (Ranaghat AsI) তিনি। বর্তমানে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু এই রতনবাবু। গত মঙ্গলবার বিকেলে রিভলভার হাতে নিয়ে তার ডাকাতদলের পিছু নেওয়া ভিডিয়ো ভাইরাল (Viral Video) হতেই ‘থ’ সকলে। এও সম্ভব! ঠিক যেন কোনও অসম্ভব বিষয়কেই সম্ভব করে দিয়েছেন তিনি।
ঠিক কি ঘটেছিল? জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে রানাঘাট থানায় টেবিল ডিউটির দায়িত্বে ছিলেন এএসআই রতন। বেলা ৩ টা নাগাদ রানাঘাটের গয়নার শোরুমের এক নিরাপত্তাররক্ষী রতনবাবুকে ফোন করে জানান, একদল ডাকাত তাদের দোকানে হানা দিয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই গাড়ির চালক-সহ চারজন লাঠিধারী পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান রতন।
পুলিশ এসেছে দেখে লুটপাঠ করে বেরিয়ে পড়ে ডাকাতের দল। ডাকাতদলের কাছে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র! পুলিশকে নিশানা করে পর পর তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে তারা। অন্যদিকে তাদের বিপরীতে লাঠিধারী পুলিশকর্মীরা অসহায়। তবে রতনের সাহসের কাছে এদিন ম্লান হয়ে যায় সব। কোমর থেকে পুরনো রিভলভার বের করেই চালান গুলি। আর তাতেই দুটি গুলিতে গুরুতর জখম হয় ডাকাতদলের দুই সদস্য। বাকি দুজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: DA আন্দোলনের মাঝেই বিরাট সুখবর! এবার কপাল খুলছে এই সমস্ত সরকারি কর্মীদের
১০২ কেজি ওজন নিয়ে ওই ডাকাতের দলকে প্রায় ৫০০ মিটার ধাওয়া করেন রতন। নিজের জং ধরা রিভলভার দিয়ে নিশানা করে ডাকাত দলের চার সদস্যের মধ্যে দু’জনকে ঘায়েল করেন রতন। এরপর খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছায় সশস্ত্র পুলিশ আধিকারিক। মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই ডাকাত দলের কাছ থেকে উদ্ধার হয় দুটি মোটর বাইক, নগদ তিন লক্ষ ৭০ হাজার টাকা সহ চারটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। উদ্ধার হয় একাধিক ভুয়ো-নথিপত্র। ওদিকে মঙ্গলবার বিকেলে রিভলভার হাতে নিয়ে রতনের ডাকাতদলের পিছু নেওয়া ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই শোরগোল রাজ্যে। বইছে শুভেচ্ছার বন্যা।
আরও পড়ুন: আজ থেকে সাথেই রাখুন ছাতা! ফের দাপিয়ে ঝড়-বৃষ্টি কলকাতা সহ এই ৭ জেলায়, জারি সতর্কতা
ঘটনা প্রসঙ্গে রতন বলছেন, “তখন কার হাতে কোন অস্ত্র কিছুই মাথায় ছিল না। একটাই কথা মাথায় ঘুরছিল- পুলিশের সম্মান।’’ তার কথায় ‘‘পুলিশের মান বাঁচাতেই হতো।’’ তিনি আরও বলেন, ” ডাকাতির খবর পাওয়া মাত্রই মাথায় ঘুরছিল, কোনও ভাবে যেন ওরা পালিয়ে যেতে না পারে। ভয় হয়নি। তবে আশঙ্কা ছিল ডাকাতদের ধরার আগেই যেন গুলি না শেষ হয়ে যায়!’’
জানা গিয়েছে ব্যারাকপুর সেন্টারের ১৯৯৬ ব্যাচের কনস্টেবল থেকে সদ্য এএসআই পদে উন্নীত হয়েছেন তিনি। তার এহেন সাহসীকতায় গর্বিত রতনের পরিবার সহ গোটা রাজ্যবাসী। এই বিষয়ে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কান্নান বলেন, ‘‘রতন-সহ গোটা দল যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, তার জন্য প্রত্যেককে জেলা পুলিশ সুপার হিসাবে ধন্যবাদ জানালাম। আর রতন বাবুর লড়াইটা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশ জেলা ওদের জন্য গর্বিত।’’
রতনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। বাড়িতে দুই সন্তান ও স্ত্রী। গোটা ঘটনা জানতে পেরে রতনের স্ত্রী বলন, ‘‘গর্ব তো হচ্ছেই।” তবে নিজের দুশ্চিন্তার কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “তবে চিন্তাও হয়। ছবিগুলো দেখছি আর আঁতকে উঠছি। যদি একটা গুলি ওর লেগে যেত!’’