বাংলা হান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানের সেনা প্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (Donald Trump) নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার দাবি জানিয়েছেন। মুনির বলেছেন যে ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বন্ধ করেছিলেন। যার জন্য তাঁর নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়া উচিত। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি কেলি এটাও জানান যে, পাকিস্তানের সেনা প্রধান ট্রাম্পকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের সুপারিশ করেন। যার পরে ট্রাম্প মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান। এই বৈঠকটি গত ১৮ জুন হোয়াইট হাউসের ক্যাবিনেট রুমে সম্পন্ন হয়। যেখানে সংবাদমাধ্যমকে উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি।
ট্রাম্পের (Donald Trump) জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবি আসিম মুনিরের:
ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত: জানিয়ে রাখি যে, ট্রাম্প (Donald Trump) এবং মুনিরের মধ্যে এই বৈঠক এমন এক সময়ে সম্পন্ন হয়েছে যখন গত মে মাসে চার দিনের সামরিক সংঘাতের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে। পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকে এই সংঘাত শুরু হয়। যার প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবিরগুলির বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে। এরপর, গত ১০ মে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সূচনা হয়। এদিকে, ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে, তাঁর মধ্যস্থতার কারণেই এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে। যদিও ভারত এই দাবি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ট্রাম্প-মুনিরের বৈঠকের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের (Donald Trump) সাথে ফোনে ৩৫ মিনিট কথা বলেন। ওই কথোপকথনে, প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্ট করে বলেন যে, গত ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত সামরিক সংঘর্ষের পর যে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল তা ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে হয়েছিল। অর্থাৎ, কোনও বহিরাগত মধ্যস্থতার কারণে নয়। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্পকে বলেছেন যে, ভারত তার দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা কখনও গ্রহণ করেনি এবং কখনও গ্রহণ করবেও না। ভারত সর্বদাই বলে আসছে যে কাশ্মীর এবং অন্যান্য বিষয় দ্বিপাক্ষিক এবং তারা কোনও বহিরাগত হস্তক্ষেপ মেনে নেয় না।
ট্রাম্পের দাবি এবং মুনিরের সুপারিশ: তবে, ট্রাম্প তাঁর দাবিতে অটল ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের সাথে সাথে কথা বলার সময়ে ট্রাম্প (Donald Trump) বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি ছিল। আমি তাদের উভয়ের সাথেই কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেছি এটা ছিল উভয় নেতার (মোদী এবং মুনির) বুদ্ধিমত্তা। কিন্তু আমেরিকান কূটনীতির ভূমিকা ছিল এতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করে দিয়েছি। আমি পাকিস্তানকে ভালোবাসি। প্রধানমন্ত্রী মোদীও একজন অসাধারণ ব্যক্তি। গত রাতে আমি তাঁর সাথে কথা বলেছি এবং আমরা ভারতের সাথে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি করতে চলেছি।এই ব্যক্তি (মুনির) পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।” ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন যে, তিনি উভয় দেশের সাথে বাণিজ্য বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন। যার ফলেই যুদ্ধবিরতি হয়। এদিকে, মুনির দাবি করেন যে পহেলগাঁও হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল এবং ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের ফলে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, এর ভিত্তিতে ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য।
আরও পড়ুন: হু হু করে বাড়ছে দাম! ইরান থেকে ভারতে বন্ধ হল এই জিনিসের সরবরাহ, চিন্তায় আমজনতা
ট্রাম্প-মুনির বৈঠকের অর্থ: মুনিরের আমেরিকা সফর এবং ট্রাম্পের (Donald Trump) সাথে তাঁর বৈঠক অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এখন পশ্চিম এশিয়ায় ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, এই বৈঠকের মাধ্যমে ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে কৌশলগত সহযোগিতার জন্য পাকিস্তানকে প্রস্তুত করতে চান। কারণ ইরানের সাথে পাকিস্তানের ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত এবং বালোচিস্তানের কৌশলগত গুরুত্ব আঞ্চলিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুন: যার দিকে ছিল সবার নজর ভারতের সেই তারকা প্লেয়ারই পেলেন চোট! চিন্তা বাড়ল শুভমান গিলের
নোবেল পুরস্কারের বিষয়ে এর আগেও আলোচনায় ছিলেন ট্রাম্প: জানিয়ে রাখি যে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) নাম এই প্রথমবারের মতো উঠে আসেনি। ২০২০ সালে, একজন নরওয়েজিয়ান এমপি তাঁকে ইজরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মধ্যে চুক্তির জন্য এই পুরস্কার প্রাপক হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প তখন নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি। উল্লেখ্য যে, আলফ্রেড নোবেলের নামে নামাঙ্কিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিশ্বব্যাপী শান্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার বিষয়ে অগ্রণী ব্যক্তিদের প্রদান করা হয়।
দেখুন গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও: