একটা সময়ে ভারতে নেতাজির ছবি সহ ছাপা হত নোট! স্বীকৃতি দিয়েছিল এই দেশগুলি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: একটা সময়ে ভারতীয় নোটে (Indian Currency) থাকত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhas Chandra Bose) ছবি! হ্যাঁ, প্রথমে এই বিষয়টি জেনে কিছু অবাক হয়ে গেলেও এটা কিন্তু একদমই সত্যি। বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করব। প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, স্বাধীন ভারতে যখন প্রথম নোট ছাপা হয়েছিল, তখন তাতে কারোর ছবি ছিল না। স্বাধীনতার পর প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে ব্রিটেনের রাজার পরিবর্তে ভারতীয় মুদ্রার নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি ছাপা হবে। এর জন্য নকশাও প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধীর ছবির পরিবর্তে কারেন্সি নোটে অশোক স্তম্ভ ছাপার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে, স্বাধীনতার ২২ বছর পর, মহাত্মা গান্ধীর ছবি ভারতীয় কারেন্সি অর্থাৎ কাগজে মুদ্রিত ভারতীয় মুদ্রায় প্রদর্শিত হয়েছিল। তাও মাত্র এক টাকার নোটে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইট অনুসারে, ভারত সরকার প্রথম ১৯৪৯ সালে এক টাকার নোটের একটি নতুন নকশা তৈরি করে। তবে, স্বাধীনতার আগে দেশের একজন লড়াকু মুক্তিযোদ্ধার ছবি ছিল ভারতীয় মুদ্রার নোটে। সেই সময়ে ১০০ টাকার নোটে থাকত নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ছবি।

   

নোটে ছাপা হত নেতাজির ছবি: মূলত, স্বাধীনতার আগে ভারতীয় মুদ্রায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ছবি ছাপা হত। এই মুদ্রা আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক জারি করেছিল। ভারতীয় মুদ্রার ইতিহাসে এই নোট একটি আলাদা স্থান ধরে রেখেছে। এর কারণ হল এই নোটের ডান পাশে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ছবি রয়েছে। নোটের ঠিক ওপরে লেখা আছে আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক। পাশাপাশি, মাঝখানে লেখা রয়েছে জয় হিন্দ। নিচে রয়েছে সুভাষ চন্দ্র বসু লেখা। তবে, এমন নোট ছাপা হলেও তার কোনো সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। কারণ ভারত সরকার এই নোট ছাপেনি। কিন্তু যেসব দেশ আজাদ হিন্দ সরকারকে সমর্থন করেছিল তারা এই মুদ্রাকে স্বীকৃতি দেয়।

At one time notes were printed with Netaji's picture in India.

আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক ১৯৪৪ সালে গঠিত হয়: তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্দামান ও নিকোবরে আরজি হুকুমত-ই-আজাদ হিন্দ নামে স্বাধীন ভারতের প্রথম অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছিলেন। সরকার পরিচালনার জন্য তৎকালীন বার্মার (মায়ানমার) রাজধানী রেঙ্গুনে ১৯৪৪ সালে আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই ব্যাঙ্কটি ১০, ১০০, ১,০০০ টাকার মতো বিভিন্ন মূল্যের নোট ছাপিয়েছিল। নেতাজির পাশাপাশি, এই নোটগুলিতে মহাত্মা গান্ধী এবং লক্ষ্মী সেহগালের ছবিও ছিল। যিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের মহিলা রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ছিলেন। কিন্তু ভারতের সরকারি মুদ্রার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক ছিল না।

আরও পড়ুন: শেষ হল দীর্ঘ ২০ বছরের কেরিয়ার! ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবসর ঘোষণা কার্তিকের

মহাত্মা গান্ধীর ছবি প্রথম কবে নোটে আসে: ১৯৬৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর ছবি নোটে প্রথম পরিলক্ষিত হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ১৯৬৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর ছবি সহ এক টাকার নোট জারি করেছিল। মহাত্মা গান্ধীর ১০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে RBI। এতে মহাত্মা গান্ধীকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। এবং পটভূমিতে ছিল সেবাগ্রাম আশ্রম। উল্লেখ্য যে, এখন ভারতীয় মুদ্রায় মহাত্মা গান্ধীর যে ছবি দেখা যাচ্ছে তা কোনো ক্যারিকেচার নয়। বরং, এটি একটি মূল ছবি থেকে তোলা একটি কাটআউট। ছবিটি ১৯৪৬ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনের (তখন ভাইসরয় হাউস) বাইরের। এই ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ নেতা লর্ড ফ্রেডরিক উইলিয়াম প্যাট্রিক লরেন্স।

আরও পড়ুন: “ওদের লক্ষ্য মোদীকে গালিগালাজ করা”, এক্সিট পোলের ফলাফল দেখেই বিরাট প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর

মহাত্মা গান্ধীর ছবি সম্বলিত ৫০০ টাকার নোট বন্ধ: এদিকে, ১৮ বছর পর RBI আরেকটি নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি প্রকাশ করে। সেটি ছিল ১৯৮৭ সালে চালু করা ৫০০ টাকার নোট। যদিও, RBI ১৯৯৬ সালে এই নোটটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ১৯৯৭ সালে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মহাত্মা গান্ধীর ছবি সহ একটি নতুন সিরিজের নোট ছাপিয়েছিল। ওইসব নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি ছাপা হয়। মহাত্মা গান্ধী সিরিজের এই নোটগুলি নতুন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সহ ছাপা হয়। যার ওয়াটারমার্কগুলিও পরিবর্তন করা হয়েছিল। এই নোটে এমন বৈশিষ্ট্যগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যাতে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরাও সহজেই সেগুলি শনাক্ত করতে পারেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর