বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনের যে সময়টাতে বার্ধক্যের কাছে হার মেনে বাকিরা বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবেন ঠিক সেই সময়টাতেও নিজের কাজ যথাযথভাবে করে চলেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) চিলুকুরি সানথাম্মা। শুধু তাই নয়, ৯৩ বছর বয়সেও প্রতিদিন ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে আসেন পদার্থবিজ্ঞানের এই অধ্যাপিকা। জানা গিয়েছে, হাঁটু প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারের পরেও, তিনি কলেজের পড়ুয়াদের পড়ানো বন্ধ করেননি। বরং, ক্রাচকে সঙ্গী করেই সেঞ্চুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপ নিয়ে গত ছয় বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন তিনি। এছাড়াও, তিনি দীর্ঘ সাত দশক ধরে পদার্থবিদ্যা পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছেন।
এই প্রসঙ্গে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনুসারে জানা গিয়েছে যে, সানথাম্মার মা-ও ১০৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। পাশাপাশি, মায়ের শিক্ষাকে মাথায় নিয়েই তিনি এতদূর আসতে পেরেছেন বলে মনে করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে সানথাম্মা জানান, “আমার বয়স আমাকে বিরক্ত করে না। স্বাস্থ্য আমাদের মনে এবং সম্পদ আমাদের হৃদয়ে। আমাদের উচিত সবসময় আমাদের মন ও হৃদয়কে সুস্থ রাখা। আমি নিজেকে আইনস্টাইনের সাথে তুলনা করি না। তবে আমার একটাই লক্ষ্য আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পড়াতে থাকা।”
১৯২৯ সালের ৮ মার্চ মাছিলিপত্তনমে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এদিকে, মাত্র ৫ মাস বয়সেই সানথাম্মা তাঁর বাবাকে হারান। এমতাবস্থায়, মায়ের কাছেই মানুষ হন তিনি। যদিও, শিক্ষকতা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথেও জড়িত থাকেন সানথাম্মা। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই তিনি তাঁর বাড়িটিকে বিবেকানন্দ মেডিকেল ট্রাস্টকে দান করেছেন এবং এখন তিনি একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন।
এমতাবস্থায়, প্রফেসর সানথাম্মার শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রম তাঁর সমবয়সীদের পাশাপাশি পড়ুয়াদেরকেও অবাক করেছে। এই প্রসঙ্গে বিএসসি প্রথম বর্ষের অপটোমেট্রির ছাত্রী হাসিনা বলেন, “আমি প্রফেসর সানথাম্মার পদার্থবিদ্যার ক্লাস কখনও মিস করি না। আমি অধীর আগ্রহে তাঁর জন্য অপেক্ষা করি। তিনি কখনই ক্লাসে দেরি করে আসেন না। শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমের কারণে তিনি আমাদের সবার কাছে আদর্শ হয়ে রয়েছেন। তাঁর বিষয় সম্পর্কে অনেক জ্ঞান রয়েছে।”
১৯৪৫ সালে অধ্যাপক মহারাজা বিক্রম দেব ভার্মা পদার্থবিদ্যায় ভালো ফলাফলের জন্য সানথাম্মাকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। সেই সময় তিনি বিশাখাপত্তনমের এভিএন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী ছিলেন। তিনি পদার্থবিদ্যায় বিএসসি অনার্স করে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোওয়েভ স্পেকট্রোস্কোপিতে ডিএসসি (পিএইচডির সমতুল্য) সম্পন্ন করেছেন। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসাবে শিক্ষকতা শুরু করেন।
পাশাপাশি, প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, ১৯৮৯ সালে অবসর নেওয়ার পরেও, তিনি গবেষণায় জড়িত ছিলেন এবং অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অনারারি লেকচারার হিসাবে পুনরায় যোগদান করেন। এছাড়াও, সানথাম্মা তাঁর বিষয় সম্পর্কিত সম্মেলনে যোগদানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা এবং স্পেন সহ একাধিক দেশে ভ্রমণ করেছেন। সর্বোপরি, পারমাণবিক স্পেকট্রোস্কোপি এবং আণবিক স্পেকট্রোস্কোপি সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ তাঁকে ২০১৬ সালে প্রবীণ বিজ্ঞানীদের বিভাগে বেশ কয়েকটি পুরস্কার এবং স্বর্ণপদক এনে দেয়।