থাইল্যান্ডেও আছে একটি অযোধ্যা, সেখানে ‘রামায়ণ”কে দেওয়া হয়েছে জাতীয় গ্রন্থের মর্যাদা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত পাঁচই আগস্ট রামনগরী অযোধ্যা (Ayodhya) একটি ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী হয়েছিল। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম মন্দিরের ভূমি পুজো করে হিন্দুদের ৫০০ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটান। আর এবার আমরা আপনাদের থাইল্যান্ডের অযোধ্যা হিসেবে পরিচিত একটি জায়গা নিয়ে আপনাদের অবগত করাব। শোনা যায় যে, ১৫ শতাব্দীতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ‘অয়ুথ্যা” (Ayutthaya, Thailand) শহর ছিল, যেটি স্থানীয় ভাষায় অযোধ্যার সমকক্ষ। পরে বার্মার সেনা আক্রমণের ফলে ওই শহর ধ্বংস হয়ে যায় আর সাথে সাথে মন্দির এবং মন্দিরের সব মূর্তিও নষ্ট করে দেওয়া হয়।

Ayutthaya

ইতিহাসের পাতা পাল্টালে দেখা যাবে যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে এক সময় রামের রাজত্ব ছিল। শোনা যায় যে, সেখানকার চক্রী বংশের প্রথম রাজার উপাধি রাম প্রথম ছিল। থাইল্যান্ডে আজও এই রাজবংশ আছে। যখন বার্মার সেনা সেখান থেকে চলে যায়, তখন দেশে নিজেদের সংস্কৃতির মূল খোঁজার অভিযান চলে। আর সেই সময় থেকেই সেখানে রামায়ণকে (Ramayana) আবারও প্রতিষ্ঠা করা হয়।

রামায়ণের যেই সংস্করণ আজ এখানে প্রচলিত আছে, সেটা রাম প্রথমের সংরক্ষণে রামলীলা রুপে ১৭৯৭ থেকে ১৮০৭ এর মধ্যে উন্নত হয়েছিল। রাম প্রথম এই রামায়ণের কিছু অংশ আরও একবার লিখেছিলেন। মহাকাব্য রামাকিন (Ramakien) এই কথা উল্লেখ আছে, আর এই মহাকাব্য স্থানীয় ভাষায় রামায়ণ নামেই পরিচিত। থাইল্যান্ডের রাজা সমেত প্রায় গোটা দেশই রামাকিন-এর ১৮ শতাব্দীতে অস্তিত্বে আসা সংস্করণকে জাতীয় গ্রন্থ হিসেবে মানে।

১৯৩২ সালে থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রের স্থাপনা হয়। এরপর ১৯৬৭ সালে থাইল্যান্ডের সরকার এই শহরের পুনঃনির্মাণের দিকে নজর দেয়। সেখানকার জঙ্গল পরিস্কার করে তখনকার ধ্বংসাবশেষ গুলোকে উদ্ধার করা হয়। শহরের মধ্যে একটি প্রাচীন পার্ক আছে। সেখানে মাথা ছাড়া স্তম্ভ, দেওয়াল, সিঁড়ি আর বুদ্ধের মাথা ছাড়া মূর্তি আছে। সেই পার্কে বালির পাথরের বানানো একটি বুদ্ধ মূর্তির মাথা একটি প্রাচীন বটবৃক্ষের শিকড়ের সাথে জড়িয়ে আছে। ওই গাছটিতে অযোধ্যায় বট মহাথাট মানে ১৪ শতাব্দীর প্রাচীন সাম্রাজ্যের স্মৃতি চিহ্নের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন আছে।

thailand ayutthaya wat mahathat

ভারতে রাম জন্মভূমি নির্মাণ ন্যাস ট্রাস্ট ২০১৮ সালে থাইল্যান্ডে একটি ভব্য রাম মন্দির নির্মাণের ঘোষণা করেছিল। আর সেই মন্দির নির্মাণ শুরুও হয়ে গেছে। এই রামমন্দির শহরের পাশে বিখ্যাত সোরায় নদীর তীরে বানানো হচ্ছে। জানিয়ে দিই, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকককে মহেন্দ্র অযোধ্যাও বলা হয়। মানুষের মান্যতা অনুসারে এটি ভগবান ইন্দ্রের বানানো মহান অযোধ্যা। আর এই কারণেই থাইল্যান্ডের সমস্ত রাজা সেখানে থেকে দেশ চালনা করতেন।

Guardians creatures Wat Ratchaburana Thailand Ayutthaya

সেখানে স্থানীয় ভাষায় রামাকিনকে প্রধান ধর্মগ্রন্থ মানা হয়। যেটা আদতে রামায়ণই। রামাকিন এর অর্থ হল, রামের কীর্তি অথবা রামের মহিমা। সেখানে অনেক সম্যেই রামাকিন আধারিত নাটক আর পুতুলের প্রদর্শন হয়। আর এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য স্থানীয় মানুষেরা ভিড় জমান।

এই নাটকে রাম, সীতা, লক্ষণ, বালী, হনুমান আর রাবণের মতো পৌরাণিক চরিত্র থাকে। তবে কথা রামায়ণের থেকে আলাদা থাকে। যদিও নাটকের সারাংশ রাম আর সীতাকে নিয়েই করা। রামাকিন এর শেষে রাম আর সীতার দ্বিতীয়বার মিল হয়। মাটি ভাগ করে চলে যাওয়া সীতাকে ফেরত আনার জন্য রাম কঠিন তপস্যা করেন। আর রামের কঠিন তপস্যার কারণে সীতা আবারও ফেরত আসেন।

যদিও ভগবান রাম ছাড়া বৌদ্ধ ধর্ম মানা এই দেশে অনেক হিন্দু প্রতীক পাওয়া যায়। যেমন সেখানকার রাষ্ট্রীয় প্রতীক গড়ুর, যেটি হিন্দু পুরাণ থেকে প্রেরিত। এর সাথে সাথে ব্যাংককের এয়ারপোর্টের আরাম কক্ষে সমুদ্র মন্থনের সাথে মিলিত দৃশ্য দেখা যায়।


Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর