বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একসময় দেশ (India) স্বাধীনের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhas Chand Bose)) আজাদ হিন্দ ফৌজে (Azad Hind Fauj)। দেশকে ব্রিটিশ মুক্ত করতে দীর্ঘদিন চালিয়েছিলেন সংগ্রাম। অবশেষে সবার অগোচরে চলে গেলেন সেই বীর যোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পর ওনাকে আর কেউই মনে রাখনি। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য বরাদ্দ পেনশনের খাতিরে ঘুরেছেন প্রশাসনের দরজায়। কিন্তু মেলেনি যোগ্য সন্মান।
মান-অভিমান নিয়ে অবশেষে প্রয়াত হলেন কিশনগঞ্জের আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্য রামবিলাস মাহাতো। মৃত্যুর সময় ওনার বয়স হয়েছিল ১১২ বছর। জীবদ্দশায় সন্মান তো পাননি, এমনকি মৃত্যুর পরেও যোগ্য সন্মান দেখানোর প্রয়োজন মনে করেনি কোনও রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে প্রশাসন।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্যের ৮০ বছরের ছেলে কানহাইয়া মাহাতো জানান, প্রায় একবছর ধরে অসুস্থ ছিলেন বাবা। ১৯৪৫ সালে নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের ডাকে ৫০ জন যুবককে নিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। উনি সেই সময় রেঙ্গুনে গিয়েছিলেন। রেঙ্গুনের জিয়াবাড়ি চিনি মিলের ক্যাম্পাসে ব্রিটিশদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আজাদ হিন্দ বাহিনীর নতুন সদস্যদের ট্রেনিং সেন্টার খোলা হয়েছিল। সেখানে মাঝেসাঝেই যেতেন স্বয়ং নেতাজি। আবহাওয়া প্রতিকূল না হওয়ায় আর জাপানের অসহযোগিতার ফলে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের এই বাহিনী। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়, কিন্তু স্বাধীন ভারতে আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যরা সরকারের থেকে কোনও সুযোগ সুবিধা পাননি।
১৯৭২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তত্বাবধানে রামবিলাস মাহাতো সমেত ১৬ টি পরিবারকে রেঙ্গুন থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর তাদের কিশনগঞ্জের পুঠিয়া ব্লকের রায়পুর গ্রামে তিন একর জমি দেওয়া হয় বসবাসের জন্য। ভারতে ফিরে আসার পর রামবিলাস বাবু প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে বেরান সাহাজ্যের জন্য। কিন্তু কোনও সরকারি সাহাজ্য দেওয়া হয়নি ওনাকে।
আর এতদিন পর সবাইকে বিদায় জানিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈনিক রামবিলাস মাহাত ১১২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। বুকে করে নিয়ে গেলেন অনেক মান অভিমান।