বাংলা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ শরৎচন্দ্র, রামায়ণ, মহাভারত! যুক্ত হল পয়গম্বরের জীবনী

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ২০১৬ সাল থেকেই পাঠ্যপুস্তক সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছিল বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলাম সংগঠন। তাঁদের দাবি ছিল যে, পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম বিরোধী এবং হিন্দু লেখকদের লেখা বাদ দিতে হবে। নতুন বই প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে যে, তাঁদের দাবিই পূরণ হয়েছে।

দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্যসুচিকেই নতুন ভাবে সাজানো হয়েছে। আর সেখানেই দেখা গিয়েছে যে, হেফাজতে ইসলামের দাবি মতো পাঠ্যসূচিতে একাধিক সংযোজন-বিয়োজন ঘটেছে। বাদ পড়েছে হুমায়ুন আজাদের “বই” কবিতাটিও। এছাড়াও, ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাদ পড়েছে “রাঁচি ভ্রমণ”, তার পরিবর্তে এসেছে মুসলিম দেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখা। পাশাপাশি, সত্যেন সেনের “লাল গরুটা”র জায়গায় যুক্ত হয়েছে “সততার পুরস্কার”।

সপ্তম শ্রেণিতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “লালু”র পরিবর্তে এসেছে “মরু ভাস্কর”। শুধু তাই নয়, অষ্টম শ্রেণিতে বাদ গেছে রামায়ণ, নবম শ্রেণিতে বাদ পড়েছে বৈষ্ণব পদাবলি ও মঙ্গলকাব্যের সাথে মিল থাকা দুই কবিতা। আর এইসব গ্রন্থের বাদ পড়াকেই নিজেদের দাবি পূরণ হিসেবে দেখছে হেফাজতে ইসলাম।

এই প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ জানিয়েছেন যে, “মোট পাঠ্যসূচিতে প্রায় ১৭ টি মতো সংশোধনী নিয়ে আসা হয়েছে। যার ফলে পাঠ্যসূচিকে ফের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। যেটা অত্যন্ত সন্তোষজনক।”

WhatsApp Image 2022 01 16 at 3.09.25 PM

তবে, পাঠ্যবইয়ের এই পরিবর্তনকে কোনো দাবিপূরণ নয়, বরং স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই মনে করছেন এনসিটিবি’র এক কর্মকর্তা। এই বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন যে, “সাহিত্যকে যদি আমি সাহিত্য হিসেবে না দেখে ধর্মীয় বিষয় হিসেবে ভেবে দেখি তাহলে কিছু করার নেই। বিষয়টা হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকের পরিমার্জন, পরিশোধন, পরিবর্তন। এগুলো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।”

যদিও, এই পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। হঠাৎ করে এই পরিমার্জনের কোনো ব্যাখাই খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন যে, “পাঠ্যসূচির এই পরিবর্তনে হেফাজত যে দাবিগুলো করেছিল তা মেনে নেওয়া হয়েছে। এইটা খুবই দুঃখজনক এবং আতঙ্কজনক ঘটনা। শিক্ষাকে আমরা সংকুচিত করে ফেলছি।” পাশাপাশি, বিশ্বজুড়ে এই হানাহানির যুগে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাক্রম তৈরি করতে না পারলে জাতিকে এর মূল্য দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর