বাংলা হান্ট ডেস্ক : ভারত (India) ও বাংলাদেশ (Bangladesh) মধ্যে তিস্তার (Teesta River) জল ভাগাভাগি নিয়ে একটি খসড়া চুক্তির রূপরেখা তৈরি হয়ে আছে প্রায় এক যুগ হতে চলল। বর্ষাকাল (Wet Season) এলেই দুই দেশের মধ্যে চলতে থাকে চাপানউতোর। এই যেমন গত রবিবার ১৩ অগাস্ট রাত্রি থেকেই অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে তিস্তার জল। সোমবার, ১৪ আগস্ট সকালে ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জল প্রবাহিত হয়েছে বলে খবর। সাড়ে ৩ লাখ কিউসেক জলের ঢল সামলাতে পারছে না তিস্তা ব্যারেজ।
তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে অনেকটাই ধাতস্ত হয়েছে তিস্তার স্রোত। জানা যাচ্ছে ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সূত্রের খবর, ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় চাপ বাড়ছে তিস্তার উপর। যে কারণে বাংলাদেশ জল উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে।
জানা যাচ্ছে তিস্তার এই প্রবল স্রোত আটকায় এমন পরিকাঠামো বাংলাদেশের কাছে নেই। যে কারণে ইতিমধ্যেই রংপুরের গঙ্গাচড়ার কোলকন্দ এবং লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্রায় জল নিমগ্ন। এলাকার নলকূপ পর্যন্ত তলিয়ে যাওয়ায় পানীয় জলেরও অভাব দেখা দিয়েছে বন্যাগ্রস্ত এলাকাগুলিতে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছের ঘের এবং শাক-সবজির মাঠ। সেই সঙ্গে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন : আর কত দূর? বাকিদের ‘টাটা’ করে চাঁদের পথে ল্যান্ডার! শেষ কক্ষপথ পার করে গেল ‘চন্দ্রযান 3′
স্থানীয়দের দাবি, ‘ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে বেড়েই চলছে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারসহ উত্তরাঞ্চলের ৩৪টি নদ-নদীর জলধারা।” পাশাপাশি তারা যারপরনাই বিরক্ত বাংলাদেশ সরকারের উপরেও। প্রতিবছর একই পরিস্থিতি দেখেও কেন কোনও ব্যবস্থা করছেনা সরকার? প্রশ্ন তুলছেন বানভাসিরা। যদিও বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সমস্ত দোষারোপ যেন ভারতের ঘাড়ে দিতে পারলেই বেঁচে যায়।
আরও পড়ুন : কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! যাদবপুর কাণ্ডে প্রাক্তন ও বর্তমান মিলিয়ে গ্রেফতার আরও ৬ পড়ুয়া
এই প্রসঙ্গে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেছেন, ‘একমাস পর পর ভারত তাদের গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দিলে জলে ভাসে বাংলাদেশ। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে তাদের একটা সমাধানে আসা উচিত। নয়তো প্রতিবছর এভাবেই নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকবে সবকিছু। সাধারণ সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ‘বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত আগাম তথ্য দিয়ে গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দিলে আমরা কিছুটা হলেই রক্ষা পেতাম।’
আরও পড়ুন : চাঁদের অরবিটেও ট্রাফিক জ্যাম! শুধু চন্দ্রযান-৩ই নয়, অবতরণের জন্য লাইনে আছে অনেকেই
পাশাপাশি রংপুর জল উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের মতে, আগামী দুমাসে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ভাঙন রক্ষায় জিওব্যাগ দিয়ে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। এ বছর অন্তত ৮ থেকে ১০ বার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তা। জল বাড়লে প্রতিবারই ভাসে তিস্তাপাড়ের ৯টি উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। ডুবে যায় বাড়িঘর, জমির ফসল।’