বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক বেশ প্রভাবিত হয়েছে। ঠিক এই আবহেই, ৩ টি রাশিয়ান (Bangladesh-Russia) যুদ্ধজাহাজ বঙ্গোপসাগরে পৌঁছেছে। যার ফলে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, গত রবিবার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ টি রুশ নৌ জাহাজ, অ্যাডমিরাল ট্রিবাটস, অ্যাডমিরাল প্যান্টেলিয়েভ এবং ট্যাংকার পেচেঙ্গা এসে পৌঁছেছে।এর আগে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি মস্কো সফরে গিয়েছিলেন। এমতাবস্থায়, প্রশ্ন উঠছে যে বন্ধু রাশিয়া কি বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা করে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে? তবে, রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা স্পুটনিক জানিয়েছে যে “রাশিয়ার লক্ষ্য হল দক্ষিণ এশিয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটগুলিতে কৌশলগত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।”
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গভীর করছে রাশিয়া (Bangladesh-Russia)?
স্পুটনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী, “১৯৭২-৭৪ সালের যুদ্ধের ঘটনাবলী স্মরণে রাশিয়ার (Bangladesh-Russia) প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের জাহাজগুলি গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম সফর করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর সোভিয়েত নাবিকরা বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করেছিল।” যদিও ঢাকা আনুষ্ঠানিকভাবে নৌ সফরকে “বন্ধুত্বপূর্ণ বন্দর সফর” হিসেবে বর্ণনা করেছে। আর এই ঘটনা সবাইকে অবাক করেছে এবং বঙ্গোপসাগরে ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা সম্পর্কে জল্পনাও তৈরি করেছে।
RUSSIA BOOSTS PRESENCE IN INDIAN OCEAN
Russia aims to secure strategic access to South Asia & key trade routes.
Here’s how: pic.twitter.com/y58FHw4h8J
— Sputnik India (@Sputnik_India) April 15, 2025
বাংলাদেশে রাশিয়ান জাহাজের অর্থ কী: স্পুটনিক জানিয়েছে যে, “গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটগুলি ওই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যায়। ভারত মহাসাগরে ইতিমধ্যেই আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। বঙ্গোপসাগর সহ মহাসাগরে যাওয়ার একটি অনুকূল পথ রাশিয়ার স্বার্থে রয়েছে।” যদিও বাংলাদেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রামে রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতির ঘটনা এটিই প্রথম নয়। জানা গিয়েছে, এবার নৌবাহিনীর জাহাজগুলি বেশ কয়েকদিন বন্দরে থাকবে। যদিও সামগ্রিকভাবে এই ঘটনাকে সরকারি উদ্দেশ্যের পূরণ এবং নৌ কূটনীতি বলে জানা গেছে।এই সফর ভারতের মতো ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের বাইরে দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কৌশলের প্রতিফলন ঘটায়। একই সাথে, এটাও বিশ্বাস করা হচ্ছে যে বাংলাদেশ (Bangladesh-Russia) তার সামরিক সম্পর্ককে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও, ঢাকার দিক থেকে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি দেখা হচ্ছে।
স্পুটনিক আরও বলেছে যে “প্রযুক্তিগত কূটনীতিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই রাশিয়ার সরকারি মালিকানাধীন প্রযুক্তি জায়ান্ট ROSTEC ঢাকায় একটি কেন্দ্র খুলেছে।” স্পুটনিক জানিয়েছে যে, রাশিয়ান নৌবাহিনীর এই যুদ্ধজাহাজগুলি ইন্দো-প্যাসিফিক সফরে রয়েছে। যেখানে তারা গত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ইরান, চিন এবং পাকিস্তানে পৌঁছনোর পরিকল্পনা করছে। গত মার্চ মাসে, রাশিয়া, চিন এবং ইরান ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম সিকিউরিটি বেল্ট-২০২৫ মহড়ার জন্য একত্র হয়েছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল ছিনতাইয়ের সময় জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজগুলিকে রক্ষা করা। এছাড়াও, এপ্রিলের শুরুতে, ভারত ও রাশিয়ার (Bangladesh-Russia) নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরে একটি যৌথ নৌ মহড়া পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন: বিলিয়ার্ডসে ফের বাজিমাত করলেন কলকাতার সৌরভ কোঠারি! হলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন
ভারত এবং চিনের জন্য এর অর্থ কী: মানিকন্ট্রোলের রিপোর্ট অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে রুশ নৌবাহিনীর জাহাজ সফরের লক্ষ্য হল চিনের ওপর নির্ভরতা কমাতে সামরিক অংশীদারিত্বকে বৈচিত্র্যময় করার প্রচেষ্টা। যা চিনের চিন্তা বাড়াতে পারে। SIPRI (স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-র এর তথ্য অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট অস্ত্র আমদানির প্রায় ৭৪ শতাংশ চিনের ছিল। যা ওই দেশটিকে বাংলাদেশের প্রধান সামরিক সরবরাহকারী করে তোলে। বাংলাদেশ চিন থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে। যার মধ্যে রয়েছে ফ্রিগেট, করভেট, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান এবং সাবমেরিন। অতএব, বাংলাদেশ (Bangladesh-Russia) অস্ত্রের জন্য চিনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: কড়া পদক্ষেপ BCCI-র! টিম ইন্ডিয়া থেকে বাদ গম্ভীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, বরখাস্ত হলেন আরও ২ জন
এদিকে, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, চট্টগ্রাম বন্দরে রাশিয়ান নৌবাহিনীর জাহাজ পরিদর্শনের দু’টি ভিন্ন দিক থাকতে পারে। মানিকন্ট্রোলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে চিনের প্রভাবের ভারসাম্য রক্ষার জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার (Bangladesh-Russia) ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিকে স্বাগত জানাতে পারে নয়াদিল্লি। এমনিতেই, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি সম্পর্ক রয়েছে। পাশাপাশি, এই দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্কও রয়েছে। তাই এই সফর ভারতকে “অস্বস্তি”-র মধ্যে নাও ফেলতে পারে। তাছাড়া, বাংলাদেশ এবং রাশিয়া উভয়ের সাথেই দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের কারণে মনে করা হচ্ছে যে রাশিয়া ইতিমধ্যেই ভারতকে এই বিষয়ে অবহিত করেছে। তবে, ভারতের জন্য এখনও কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে। বন্ধুত্ব সত্বেও, তৃতীয় পক্ষের নৌবাহিনীর আগমন ভারত মহাসাগরে “ভারত-নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা স্থানের” জন্য নয়াদিল্লির দৃষ্টিভঙ্গিকে জটিল করে তুলতে পারে।