শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে বাঁকুড়ায় শুরু বন্ধুত্বের উৎসব ‘সয়লা’র

ইন্দ্রানী সেন,বাঁকুড়া: এখানে বন্ধুত্ব আনুষ্ঠানিক আমৃত্যু চিরস্থায়ী। গোটাহলুদ পান সুপুরি বাতাসা আর সিঁদুর হলুদ দইয়ের ফোঁটায় অক্ষয়। ঠাকুর এখানে বন্ধু তাইতো বন্ধু ঠাকুরের সামনে শপথ করে বলতে হয় “উপরে খই নীচে দই তুই আর আমি চিরকালের সই” আর বন্ধু বাছার ক্ষেত্রেও রয়েছে অভিনবত্ব। অবিবাহিত বিবাহিত শিশু কিশোর কিশোরী বৃদ্ধ বৃদ্ধা সবার জন্য আজ সয়লাতলায় বন্ধুত্বের হাতছানি। মেয়েদের জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম থাকলেও ছেলেরা শোলার মালা একে অপরকে পরিয়ে স্যাঙাত পাতান।
সোস্যাল মিডিয়ার বাইরে গিয়ে সত্যিকারের বন্ধু পাতাতে গেলে অবশ্যই আপনাকে আসতে হবে বাঁকুড়ার ইন্দাসের আকুইএর এই বন্ধুত্বের উৎসবে। স্থানীয় ভাষায় ‘সহেলা’ আর গাঁয়ের লোক বলে ‘সয়লা’।

IMG 20191015 WA0015

এবারে আসুন জেনে নিই এই উৎসব শুরুর কথা আকুই গ্রামের প্রবীণ নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানাগেল এই উৎসব শুরুর ইতিহাস আজ অজানা। ছোট থেকেই বাপ ঠাকুরদার হাত ধরে সয়লা দেখতে অভ্যস্ত তাঁরা। স্থানীয় বাসুদেব গুঁই,অর্ধেন্দু রক্ষিত, তারাপদ দত্তরা বলেন,” আকুই এ পরমানিক বা বর্গক্ষত্রিয়দের ঠাকুর হলেন দেবী মনসা। তৎকালীন সমাজে অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষের হাতেই পুজিত হতেন মা। কিন্তু আকুইএর সয়লা উৎসবে ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেন। এমনটাই আশি বছর ধরে দেখে আসছি।” আকুই এর সয়লার সাথে অন্যান্য সয়লার পার্থক্য এখানেই যে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সয়লার প্রস্তুতি শুরু হয় একমাস আগে। গ্রামের সমস্ত দেবদেবীদের মন্দিরে ‘গোয়া’ অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণ করা হয় পান সুপুরি আর গোটাহলুদ দিয়ে। ‘গোয়া চালানো’ বলে পরিচিত এই লোকাচার। সয়লার দিন আকুই স্কুল সংলগ্ন মনসা মন্দির থেকে শোভাযাত্রা সহকারে দেবীমুর্তি ও তাঁর সহচর সঙ্গীদের আকুই স্কুলমাঠের স্থায়ী মঞ্চে নিয়ে আসা হয় উৎসবের জন্য। ঠাকুরের নিত্যসেবার জন্য রয়েছে জমিজমা ও এই উৎসবের জন্য বিশেষ পুজো কমিটি। সারাবছর ধরে এরাই সমস্ত কিছু দেখাশোনা করে। তিনদিনব্যাপী নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যাত্রাপালা মেলাতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন ইন্দাস থানার পুলিশ। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক ব্যবস্থা থাকে।এই বছর উৎসব কমিটির সম্পাদক সুদীপ দের কথায়,”সয়লা হল মিলনের উৎসব ছোট থেকেই এই উৎসব ঘিরে গোটা গ্রাম মেতে উঠে। প্রত্যেকের বাড়ি কুটুম্ব সজ্জন আসে।প্রত্যেক বাড়িতে থাকে রাধুনীর ব্যবস্থা।শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে আমরাও এবার এই উৎসবের আয়োজন করেছি। আকুই সয়লা কমিটির পক্ষথেকে প্রত্যেকেই সাদর আমন্ত্রণ জানাই”।

সম্পর্কিত খবর