বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাবা পেশায় টোটো চালক। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেঘুরে দিনের শেষে সামান্য কিছু টাকা আয় করেন। লকডাউনের সময় সেই আয়ও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দু’বেলা ভাতের হাঁড়ি চড়বে কীভাবে, তা ভেবে পরিবারের সদস্যরা কুলকিনারা পেতেন না। কোনও কোনও দিন আধপেটা খেয়েও থাকতে হয়েছে। তবুও মেধাতালিকায় নাম তুলে সাফল্য এনেছে ছেলে।
বর্ধমানের আলমগঞ্জে একটি ছোট একতলা বাড়িতে থেকেই বড় স্বপ্ন বুনছে শৌনক। শত প্রতিকূলতার মাঝেও লেখাপড়ায় কখনও ঢিলেমি দেয়নি শৌনক। আলমগঞ্জের সিএমএস স্কুলে বরাবর দ্বিতীয় হয়ে এসেছে সে। এবারের মাধ্যমিকে দশম শৌনকের প্রাপ্ত মোট নম্বর ৬৮৪। সে ভূগোলে ১০০ নম্বর পেয়েছে। বাংলা, অঙ্ক এবং ভৌতবিজ্ঞানে ৯৯ নম্বর পেয়েছে। জীবন বিজ্ঞানে ৯৮ ও ইংরেজিতে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৬।
শৌনকের কথায়, ভালো ফল করতে হলে টেক্সট বই খুঁটিয়ে পড়া উচিত। এছাড়া প্রশ্ন-উত্তর লেখা দরকার। পড়াশোনার নির্দিষ্ট কোনও সময় ছিল না। ইচ্ছে হলেই পড়তে বসতাম। খেলাধুলা করতেও ভালোবাসি। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলারও প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া পুরানো কয়েন সংগ্রহ করার নেশা রয়েছে।
শৌনকের মা বলেন, “ছেলেকে স্কুলের শিক্ষকরা খুবই সহযোগিতা করেছেন। দরকার হলেই ও শিক্ষকদের ফোন করত। মাইনে দিয়ে ছেলেকে গৃহশিক্ষক দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। কোনও দিনই ওকে পড়তে বসতে বলতে হয়নি। সংসারে অভাব থাকলেও ওর পড়াশোনায় তার কোনও প্রভাব পড়েনি। ও ছোট থেকেই সবকিছু বোঝে। কখনওই কোনও কিছু কিনে দেওয়ার জন্য জেদ ধরেনি। লকডাউনের সময় স্কুল বন্ধ ছিল। সেই সময় এক আত্মীয় ওঁকে মোবাইল উপহার দিয়েছিল। সেটা ও শুধু অনলাইন ক্লাস করার সময়ই ব্যবহার করত। অন্য সময় মোবাইল হাতে নিত না।”
অভাবী সংসারের ছেলে শৌনক বন্দ্যোপাধ্যায় মাধ্যমিকে দশম স্থান অধিকার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মায়ের ইচ্ছে, ছেলে চিকিৎসক হয়ে তাঁদের মতো পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াক। তবে তার মতে, আইএএস হতে পারলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের পাশে দাঁড়ানো যাবে।