আট বছর প্রেম করে বিয়ে, সরকারি চাকরি মেলায় হাত কেটে দেয় স্বামী! সরিফুলের শেষ দেখতে চায় রেণু

বাংলাহান্ট ডেস্ক : হাসপাতালে ভর্তি তিনি। শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণা উপেক্ষা করে স্বামীর উপযুক্ত শাস্তির দাবি করলেন বর্ধমানের কেতুগ্রামের গৃহবধূ ও নার্স রেণু খাতুন। শারীরিক যন্ত্রণার থেকে এখন যেন তাঁর আতঙ্কই বেশি। যাকে ভালোবেসে বিয়ে করে এতদিন সংসার করলেন সেই স্বামীই যে এতদূর যেতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন তিনি। ডান হাতের কব্জিটাই যে কেটে নিয়েছে স্বামী। সেই স্বামী ও তার বন্ধুদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হলেন রেণু। পাশাপাশি তিনি বলেন, সরকারি চাকরিটা এখন পেতে চাই। সুযোগ পেলে আরও পড়শোনা করব।

ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার কোজলসা গ্রামে। ঘটনার পর থেকেই পালিয়েছেন অভিযুক্ত স্বামী। গুরুতর জখম অবস্থায় রেনু খাতুন দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত স্বামী সরিফুল শেখ কেতুগ্রামের বাসিন্দা। পেশায় মুদি দোকানদার। ২০১৭-র নভেম্বর মাসে সরিফুল শেখের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয় কেতুগ্রামের চিনিসপুরের বাসিন্দা রেণু খাতুনের। ২০২০ সালে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি পেয়েছিলেন রেণু। স্ত্রী চাকরি করায় বরাবরই আপত্তি ছিল স্বামীর। পরে আরজি কর থেকে নার্সিংয়ের ট্রেনিং নেন তিনি। তারপরই সরকারি হাসপাতালে নার্সিংয়ের চাকরি পান রেণু। কিন্তু স্ত্রী রেনু সরকারি হাসপাতালে চাকরি পেতেই খুশি হওয়ার বদলে স্বামী সরিফুল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। সরকারি চাকরি পেয়ে স্বামীকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন রেণু! এমনটাই ভাবতে শুরু করেন সরিফুল। তার বন্ধুরা তার মাথায় ওই কথা গেঁথে দেয়। অন্যদিকে, চাকরি করার ব্যাপারে জেদও বেড়ে যায় সরিফুলের।

রেণুর পরিবারের দাবি, শনিবার রাত্রিতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ফিস্ট করেছিল সরিফুল। রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় রেণুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হাতুড়ি দিয়ে হাত থেঁতলে টিন কাটার কাঁচি করে ডান হাতের কব্জি কেটে নেওয়া হয়।

এদিকে, রেণুর বাপের বাড়ির লোককে ফোন করে হাত কেটে যাওয়ার কথা তার জানায় শ্বশুর। বাপের বাড়ির লোকজন রেণুর শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছনোর আগেই রেণুকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে পালায় অভিযুক্ত স্বামী সরিফুল ও তার বন্ধুরা। লক্ষ্যকরার মতো বিষয় হল কাটা হাতটি তারা হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। এদিকে বাপের বাড়ির লোকজন কাটা হাতটি নিয়ে কাটোয়া হাসপাতাল থেকে বর্ধমান এবং পরে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেনুকে ভর্তি করে। বর্তমানে রেণু সুস্থ আছেন বলেই জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।

ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার পরমহংস মিশ্র জানান, ‘ওঁর ডান হাত কাটা অবস্থায় ছিল। অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। কারণ, ওঁকে ৫-৬ ঘণ্টার পর হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাই আমরা দ্রুত ওঁর অস্ত্রোপচার করেছিলাম। এখন উনি স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। ওঁর প্রাণের আশঙ্কা নেই। তবে এখনই ওঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার কথা ভাবছি না। শারীরিক ভাবে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়লেন উনি। তবে উনি চাইলে কৃত্রিম হাত লাগাতে পারবেন ভবিষ্যতে।’


Sudipto

সম্পর্কিত খবর