বাংলা হান্ট ডেস্ক : দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১১টা বছর। তবু, আজও যেন দগদগে সেই দিনটা। ২০১২ সালের ৫ই জুলাই (5th July, 2012)। প্রতিদিনের মতো সেদিও সন্ধ্যার সময় গোবরডাঙা স্টেশনে এসে থামল ভিড়ে থিকথিক করা বনগাঁ লোকাল। ট্রেন থেকে নামলেন এক যুবক।
পেশায় শিক্ষক। চোখমুখে জড়িয়ে রয়েছে সারাদিন পরিশ্রমের ক্লান্তি। আজকের পরিবেশটা যেন একটু ভিন্ন। বর্ষাকালের বিকেল, ঈশাণ কোণে মেঘ জমেছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় স্টেশনচত্বর বেশ কিছুটা নিস্তব্ধ। কেমন যেন থমথমে চারিদিক।
লোকজনের আনাগোনা এমনিতেও এই স্টেশনে কম। ট্রেন থেমেছিল তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে। সেখান থেকে সোজা এক নম্বর প্লাটফর্মের দিকে হাঁটা দিলেন সেই যুবক। স্টেশনের বাইরের বাইক-গুমটি, সেখান থেকে বাইক নিয়ে সোজা বাড়ি। কিন্তু হঠাৎই এক বিভৎস শব্দ। জমাট নিস্তব্ধতাকে ভেঙে খানখান করে দিল এক ধাতব শব্দ। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে করা গুলির আওয়াজ। গরম সিসার দানা বুকের হাড় ভেঙে বেরিয়ে গেল। ধুলোভর্তি রাস্তায় চাপচাপ রক্তের উপরই মুখ থুবড়ে লুটিয়ে পড়লেন তিনি।
সেদিন কেবল সেই তরুণ লুটিয়ে পড়েন নি, লুটিয়ে পড়েছিল প্রতিবাদের এক জ্বলন্ত অগ্নিমূর্তি, লুটিয়ে পড়েছিল সুটিয়ার শতশত তরুণীর একমাত্র বিশ্বাস, বরুণ বিশ্বাস। নির্ভীক এই যুবক একাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এলাকার নারীর সম্মান রক্ষার্থে একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছিলেন প্রতিবাদ দেওয়াল।
পেশায় শিক্ষক এই মানুষটিকে সবাই যেন ভুলেই গেছে। রাজনৈতিক নেতাদের চামচাগিরির জুগে বাংলার মানুষ ভুলেই গেছে অকালে চলে যাওয়া এক যুবক মাস্টারমশাইকে। এগারো বছর আগের পুরোনো কথা আর কে মনে রাখে? অথচ আমাদের বাংলার বুকেও জন্ম নিয়েছিল বরুণের মতো অকুতোভয় এক উদয়ন পণ্ডিত।