একসঙ্গে তিন মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে মোর্চা খুলে ফেলল ইরান! পাকিস্তানে এয়ার স্ট্রাইকের উদ্দেশ্য কী?

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইরাক (Iraq) ও সিরিয়ায় (Syria) হামলার একদিন পর গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ইরান (Iran) পাকিস্তানেও (Pakistan) ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি দ্রুত তেহরান থেকে তার কূটনীতিকদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এদিকে, পাকিস্তানও ইরানের হামলার পরেরদিন অর্থাৎ বুধবার ইরানে এয়ার স্ট্রাইক চালিয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদীদের আস্তানা ধ্বংস করার দাবি করেছে।

কেন ইরান পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াকে আক্রমণ করল: উল্লেখ্য যে, ইরান এর আগেই দাবি করেছিল যে, তারা “মিসাইল এবং ড্রোন” হামলার মাধ্যমে পাকিস্তানে বেলুচি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। তবে, এহেন ঘটনার আবহেই প্রশ্ন উঠছে যে কেন ইরান একই সাথে পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াকে আক্রমণ করল? এই প্রসঙ্গে সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পুলিশিং অ্যান্ড সিকিউরিটির ভিজিটিং ফেলো অনন্ত মিশ্র জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পাঞ্জগুরে জইশ আল-আদলের ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মূলত ইজরায়েলের গুপ্তচর এজেন্সি মোসাদের সাথে পাকিস্তানের সুন্নি সালাফি জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফল।

স্পুটনিক ইন্ডিয়ার সাথে কথা বলার সময়ে মিশ্র জানিয়েছেন যে, জইশ আল-আদলের বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার উদ্দেশ্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা নয় বরং তেহরান চায় মোসাদের ঘাঁটি এবং আমেরিকান ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করতে। তিনি বলেন, ইরাক ও সিরিয়াতেও ইরানি হামলা একই ধারায় পরিচালিত হয়েছে।

ইরানের একটি শহরে হামলা চালিয়েছে জইশ: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদি জানিয়েছিলেন যে, পাকিস্তান সীমান্তের কাছে রাস্ক শহরের একটি পুলিশ স্টেশনে হামলায় কমপক্ষে ১১ জন ইরানি পুলিশ আধিকারিক নিহত হন। এমতাবস্থায়, এএফপি জানিয়েছে, জইশ আল-আদল তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে এই হামলার দায় স্বীকার করে। এদিকে, এর আগে গত বছরের ২৩ জুলাই জইশ আল-আদলের হামলায় সীমান্ত এলাকায় টহল দেওয়ার সময় ৪ জন ইরানি পুলিশ নিহত হন। উল্লেখ্য যে, জইশ আল-আদল “আর্মি অফ জাস্টিস” নামেও পরিচিত। এটি হল একটি সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী। যা ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি মূলত পাকিস্তানে সক্রিয় রয়েছে।

পাশাপাশি, মিশ্র জানিয়েছেন, জইশ আল-আদলের বিরুদ্ধে ইরানের অভিযান এবং ইরাক ও সিরিয়ায় একদিন আগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে একটি সাধারণ সংযোগ রয়েছে এবং এই সংযোগটি ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সাথে যুক্ত। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ আল-আদল পূর্বে জান্দাল্লাহ নামে পরিচিত ছিল। এটি ইহুদি রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা সমর্থিত।

একই সাথে তিনটি দেশেই বার্তা: এছাড়াও, মিশ্র জানিয়েছেন যে, পাকিস্তান নিজের সুবিধার জন্য জইশ আল-আদলের মতো সুন্নি সালাফিস্ট দলগুলিকে বাঁচিয়ে রাখছে। সর্বোপরি, এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, ইরান একটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। যেখানে পাকিস্তান সুন্নি রীতিনীতি এবং বিশ্বাস অনুসরণ করে। তিনি বলেন, তিনটি দেশকে আক্রমণ করে ইরান একই সঙ্গে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে, যেখানেই তার স্বার্থের ওপর আঘাত করা হোক না কেন, পাল্টা আক্রমণ করতে তারা পিছিয়ে থাকবে না। তেহরান দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে জইশ-আল-আদল তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করছে।

Because of this, Iran carried out an air strike on Pakistan

সিরিয়া ও ইরাকে হামলা: এদিকে, এএফপি জানিয়েছে ইরান ইরাক ও সিরিয়ায় তার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পক্ষে বলেছে যে, এটি ইসলামিক স্টেটের নিরাপত্তা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে একটি “লক্ষ্যযুক্ত অপারেশন” এবং “উপযুক্ত শাস্তি” ছিল। সিরিয়ায়, ইরানের রিভলিউশনরি গার্ডস জানিয়েছে, কথিত ইসলামিক স্টেটের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা ইরানের সাম্প্রতিক হামলার প্রতিক্রিয়া ছিল। উল্লেখ্য যে, গত ৩ জানুয়ারি, আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা কেরমানে প্রয়াত জেনারেল কাসেম সোলেইমানির সমাধির কাছে জড়ো হওয়া একটি ভিড়কে টার্গেট করে। যেখানে ৯০ জন প্রাণ হারান এবং বহু মানুষ আহত হন। পরে এই হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ।

আরও পড়ুন: সুখবর! এবার পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমবে ১০ টাকা পর্যন্ত, আগামী মাসেই মিলতে পারে স্বস্তি

তেহরান নিউজ জানিয়েছে, “সিরিয়ার এলাকায় দায়েশ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর জমায়েত স্থানগুলি চিহ্নিত করে তারপরে তাদের ধ্বংস করার প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।” দায়েশ গত মাসেও ইরানে দু’টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। যেখানে ১০০ জন প্রাণ হারান। এদিকে, ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরান হামলা চালায়। বলা হয়, মোসাদ এই ঘাঁটি থেকে ওই এলাকায় তাদের গুপ্তচর সংক্রান্ত কাজকর্ম ও অপারেশন পরিচালনা করত।

আরও পড়ুন: ২২ জানুয়ারি কালীঘাটে রামপুজো, বিশেষ শর্তে অনুমতি দিয়ে দিল হাইকোর্ট! মুখ পুড়ল রাজ্যের

মধ্যপ্রাচ্যে গভীর সঙ্কট, তেলের ওপর পড়বে প্রভাব: উল্লেখ্য যে, সিরিয়া, ইরাক এবং পাকিস্তানে ইরানের সর্বশেষ হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যা ইতিমধ্যে গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের যুদ্ধের কারণে প্রভাবিত হয়েছে। হামাস হল ইরান সমর্থিত প্যালেস্তাইনের জঙ্গি গোষ্ঠী। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন লোহিত সাগর অঞ্চলে ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছে। যারা গত কয়েকদিন ধরে বাণিজ্যিক জাহাজ এবং তেল ট্যাংকারে হামলা চালিয়ে আসছে। এমতাবস্থায়, সামগ্রিক সঙ্কটের কারণে তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর