বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের মারাত্মক তাণ্ডবে রীতিমতো তছনছ বাংলা। বিশেষত দুই মেদনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা সামলাতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঝড় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের কথা মমতার। তবে তার আগেই ইতিমধ্যেই হাজার কোটি টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গতবছর আমফানের সময় সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। এবারও প্রথম থেকেই সরব দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী সহ একাধিক বিজেপি নেতা।
তাই এবার দুয়ারে সরকারের আদলে দুয়ারে ত্রাণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তিনি। তিনি বলেন, “মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হচ্ছে। ত্রাণের জন্য হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের পক্ষ থেকে। দুয়ারে সরকারের মতো দুয়ারে ত্রাণের ব্যবস্থা করব। গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লক পর্যায়ে চলবে এই কর্মসূচি। ৩ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত দুয়ারে ত্রাণ পরিষেবা শুরু করা হবে। কারও কথায় কোনও ত্রাণ বণ্টন হবে না। খতিয়ে দেখে ত্রাণ বিলি করা হবে। ত্রাণের জন্য আবেদন করার বাক্স থাকবে। সেখানে আবেদন করা যাবে। ১৫ দিন ধরে চলবে এই কর্মসূচি। প্রতিটি আবেদনপত্র খুঁটিয়ে দেখা হবে। ১৯ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় নেব। ১ জুলাই থেকে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে ত্রাণ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন ক্ষেত্রে কি ত্রাণ দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের পক্ষেঃ
*গাড়ি টানার গরু মারা গেলে ২৫ হাজার টাকা, বাছুর মারা গেলে ১৬ হাজার টাকা, এছাড়া গবাদি পশু গরু বা মোষ মারা গেলে ৩০ হাজার টাকা অবধি সাহায্য করবে রাজ্য সরকার। তবে সবক্ষেত্রেই আবেদনপত্র খুঁটিয়ে দেখা হবে।
*ভেড়া, শুকর, ছাগল ইত্যাদি মারা গেলে ত্রাণ হিসেবে সাহায্য করা হবে ৩ হাজার টাকা।
*গত বছরের মতো এ বছরও বিপুল ক্ষতি হয়েছে পানচাষীদের। গতবছর আমফানেও এদের সাহায্য করেছিল রাজ্য সরকার। এবছরও ক্ষতির হিসেব খতিয়ে দেখে ৫ হাজার টাকা সাহায্যের কথা বলা হয়েছে।
*অনেকেরই বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ভেঙে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ বাড়ি। এবার তিনি জানালেন এক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা সাহায্য করবে রাজ্য সরকার। তবে বাড়ির আংশিক ক্ষতি হলে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
* কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে শিল্পীর যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেলে ৪১০০ টাকা অবধি সাহায্য করবে রাজ্য। কাঁচামাল কেনার জন্যও শিল্পীদের সাহায্য করা হবে ৪১০০ টাকা। তবে যদি কাজের জায়গা, কারখানা, গোডাউন ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা অবধি সাহায্য করবে রাজ্য সরকার।
* সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে, সাধারণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা অবধি সাহায্য করা হবে।
* সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে, মৎস্যজীবীদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে এই ঝড়ে, তাদের জালের জন্য ১৬০০ টাকা, নৌকা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলে ১০ হাজার টাকা ও আংশিক ভেঙে গেলে ৫ হাজার টাকা সাহায্য দেওয়া হবে।
আমফানের সময় অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, যার দরকার তার কাছে পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণ। ইয়াস শেষ হবার পরে তিনি অভিযোগ করেছেন দিলীপ ঘোষও। আর সেই কারণেই কেন্দ্রকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থদের হাতে টাকা পৌঁছে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই অভিযোগের কথা মাথায় রেখেই এবার সরাসরি আবেদনকারীর হাতে টাকা পৌঁছে দেবার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকারও। যাতে মাঝখানে কোন কাটমানি দিতে না হয়। এখন আগামী দিনে তাঁর এই পদক্ষেপ গুলি কতটা ফলপ্রসূ হয় সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।